শীতকালে ত্বকের যত্ন কিভাবে নেব
ত্বক শরীরের এক বৃহত্তম অঙ্গ। কাজী শারীরিক সুস্থতার জন্য সুস্থ ও সুন্দর ত্বক যে অপরিহার্য, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পারিপাশ্বিক অবস্থার সঙ্গে শরীরকে খাপ খাইয়ে স্বাভাবিক অবস্থা রক্ষা করা ত্বকের একটি প্রধান কাজ।
তাই আর দেরি না করে, চলুন জেনে নি শীতকালে ত্বকের যত্ন কিভাবে নিব।
সূচিপত্র: শীতকালে ত্বকের যত্ন কিভাবে নেব
.
শীতকালে ত্বকের যত্ন কিভাবে নেব
শীতকালে ত্বকে যত্ন কিভাবে নেব তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কারণ ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ত্বকেরও পরিবর্তন হয়ে থাকে। গ্রন্থি নিঃসৃত তেলের মাধ্যমে ত্বকের উজ্জ্বলতা ও মসৃণতা বজায় রাখে। শীতের শুষ্ক আবহাওয়া ত্বকের স্বাভাবিক তেলের আস্তরণ শুষে নেয়।
ফলে ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হতে থাকে। বিশেষ করে একজিমা, সোরিয়াসিস, ইকথায়োসিস এবং অ্যালার্জিজনিত রোগে যারা ভুগে থাকেন তাদের অবস্থার অবনতি হতে থাকে। সুস্থদের এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এ জন্য শীতে ত্বকের জন্য বিশেষ যত্নের প্রয়োজন।
গোসল
অনেকে শীতে গরম পানিতে গোসল করেন। এতে ত্বক আরও শুষ্ক হয়ে থাকে। কুসুম গরম পানিতে স্বল্প সময়ে গোসল শেষ করুন। গোসলে অপেক্ষাকৃত কম ক্ষারীয় সাবান ব্যাবহার করুন। ত্বকের ধরন অনুযায়ী সাবান নির্বাচনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন। একজিমা, সোরিয়াসিস, ইকথাওসিস ইত্যাদি রোগে যারা ভুগে থাকেন, তারা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অটামিল বা সি সল্ট বাথ নিতে পারেন।
ময়েশ্চারাইজার
কোনো রোগ না থাকলেও শীতে ত্বক স্বাভাবিক রাখতে অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। ময়েশ্চারাইজার ত্বকের নিঃসৃত তেল সংরক্ষণে সহায়তা করে এবং ত্বক মসৃণ রাখে। গোসলের পর পরই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা ভালো। ক্রিম, লোশন, জেল এমনকি সাবান হিসেবে ময়েশ্চারাইজার বাজারে পাওয়া যায়। এগুলো নির্বাচনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
হিউমিডিফায়ার
ঘরে জলীয় বাষ্পের অনুপাত ঠিক রাখতে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন। এর মাধ্যমে রুমের জলীয় বাষ্প ৪০ থেকে ৬০ শতাংশে রাখুন। বিশেষ করে একজিমা, সোরিয়াসিস, ইকথাওসিস ইত্যাদি রোগে যারা ভুগে থাকেন তাদের জন্য হিউমিডিফায়ার বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে।
মনে রাখবেন, একজিমা, সোরিয়াসিস, ইকথাওসিস ইত্যাদি রোগে যারা ভুগছেন শীতে তাদের ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস, ভাইরাস ও পরজীবী জনিত ত্বকের সংক্রমণের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
কাজেই শীতে ত্বকের যত্ন নিন। সর্বোপরি—
১. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চলুন
২. খোলামেলা ও আলোকিত পরিবেশে থাকার চেষ্টা করুন
৩. চিন্তা মুক্ত থাকুন এবং
৪. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
এসব নিয়ম মেনে চললে দেখবেন এই শীতের সময়টা আপনার জন্য অনেক উপভোগ্য হয়ে উঠেছে।
শীতকালে মুখে কি মাখা উচিত?
শীত আসতে আর বেশি দেরি নেই। ঠান্ডা পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়ে যায় ত্বকের নানা রকম সমস্যা। তাই কোল্ড ক্রিম, ময়েশ্চারাইজার মাখতে শুরু করে দিয়েছেন অনেকেই। কিন্তু জানেন কি, শীত পড়ার অনেক আগে থেকেই শুষ্ক ত্বকের যত্ন নেওয়া শুরু করতে হয়?
বিশেষজ্ঞদের মতে, গরমকালে ঘাম হওয়ার দরুন অনেকেই ত্বকে জলের ঘাটতি টের পান না। কিন্তু আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ত্বকেরও পরিবর্তন হতে থাকে। বিশেষ করে স্পর্শকাতর ত্বকের ক্ষেত্রে এই সমস্যা প্রবল আকারে দেখা দেয়। শুধু ময়েশ্চারাইজার মাখা কিন্তু এর সমাধান নয়।
তা হলে কী উপায়? যে কোনও ময়েশ্চারাইজার নয়, শুধুমাত্র সেরামাইড এবং জোজোবা অয়েল দেওয়া ময়েশ্চারাইজারই ব্যবহার করতে হবে। যত বার মুখ ধোবেন, তত বারই মুখে ময়েশ্চারাইজার মাখতে হবে। ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য হাইলোরনিক অ্যাসিড এবং ল্যাকটিক অ্যাসিডযুক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
ফোম বেসড্ ফেসওয়াস
শীতের সময় যে কোনও ফোম বেসড্ বা ফেনাযুক্ত ফেসওয়াস ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। বদলে ক্রিম বেসড্ ক্লিনজার ব্যবহার করতে পারেন। মুখ পরিষ্কার করার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে এটি।
গরম জলে মুখ ধোয়া থেকে বিরত থাকুন। শীতকালে স্নান করতে গেলেই গরম জলের প্রয়োজন হয়। কিন্তু মুখ ধোয়ার ক্ষেত্রে বার বার গরম জল ব্যবহার করলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
স্নানের সামগ্রী
ইদানীং স্নানের জন্য নানা রকম সুগন্ধীযুক্ত সামগ্রী ব্যবহার করেন অনেকে। কিন্তু ব্যবহারের আগে দেখে নেওয়া উচিত, সেই সব সামগ্রীতে কোনও রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়েছে কি না। কারণ, এই ধরনের সামগ্রী ব্যবহার করলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
শীতকালে গায়ের চামড়া শুষ্ক অনুভব হয় কেন?
আমাদের ত্বকে তিনটি স্তর রয়েছে ৷ যার প্রথম স্তরটি হল বহিঃস্তর নামক স্তর, যা আমাদের কাছে দৃশ্যমান । দ্বিতীয় স্তরটি মধ্যবর্তী স্তর যাকে ডার্মিস বলে এবং তৃতীয় স্তরটি অভ্যন্তরীণ স্তর যা আমাদের কাছে দৃশ্যমান নয় এবং দেহের ভিতরে থাকে ।
এটি আমাদের ত্বকের শেষ স্তর । ত্বকের এই স্তরগুলি যদি অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিকভাবে পর্যাপ্ত পুষ্টি এবং যত্ন না পায় তবে তারা তাদের কোমলতা এবং উজ্জ্বলতা হারিয়ে ভিতরে থেকে শুষ্ক হয়ে যায় ৷ যার প্রভাব বাহ্যিকভাবে ত্বকে স্পষ্টভাবে দেখা যায় ।
শীতে ত্বক শুষ্ক হওয়ার কারণ:
ত্বক হাইড্রেটেড হচ্ছে না: শীতকালে শরীরের ভেতর থেকে হাইড্রেশনের অভাব শুষ্ক ত্বকের সবচেয়ে বড় কারণ । প্রায়শই শীতকালে আমাদের খুব কম তৃষ্ণা লাগে এবং আমরা খুব কম জল পান করি ৷ যার কারণে আমাদের শরীর হাইড্রেটেড থাকে না এবং ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় ।
ত্বকে আর্দ্রতার অভাব: শীতকালে ঠান্ডা বাতাসও আমাদের ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা কেড়ে নেয় ৷ যার কারণে আমাদের ত্বক শুষ্ক হতে শুরু করে এবং শুষ্ক হওয়ার কারণে চুলকানি শুরু হয় । চুলকানি হলে ত্বক থেকে আঁশ বেরোতে শুরু করে । শুধু তাই নয়, ঘামাচির ফলে মুখেও আঁচড়ের সৃষ্টি হয়, যা পরে ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায় ।
শীতে ত্বক নরম করার উপায়: পরিবর্তনশীল আবহাওয়া ঠেকানও অসম্ভব । আমাদের ত্বকের যত্নের রুটিনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন করে আমরা অবশ্যই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারি । জেনে নিন, শীতে ত্বককে কোমল করার উপায় ৷ শীতে ঠান্ডা এড়াতে গরম জলের পরিবর্তে হালকা গরম জল দিয়ে স্নান করা উচিত ।
স্নানের পরপরই মুখে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে সারা শরীরে বডি লোশন লাগান । মনে রাখবেন যে আপনি যে ময়েশ্চারাইজার বা বডি লোশন ব্যবহার করেন না কেন, এতে ভালো প্রাকৃতিক তেল, গ্লিসারিন এবং শিয়া বাটার বা কোকো বাটার থাকা উচিত । মুখের ঔজ্জ্বল্য ফিরে পেতে মুখের মরা কোষ দূর করা সবচেয়ে জরুরি। এর জন্য আপনার এটি পরিষ্কার করা উচিত ।
এ জন্য কাঁচা দুধে কফি পাউডার ও সামুদ্রিক লবণ মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিন । 30 মিনিট পর মাসাদজ করে হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন । নিজেকে হাইড্রেটেড রাখতে, লেবু জল, নারকেল জল এবং হার্বাল চা এর মতো প্রাকৃতিক পানীয় পান করুন । শীতকালে সবুজ শাক, কমলা, স্ট্রবেরি, লাউ, লাউ ইত্যাদি খান । রাতে ঘুমানোর আগে মুখে সিরাম লাগান ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url