পাসওয়ার্ড সংজ্ঞায়িত করুন বা আমার পাসওয়ার্ড ভুলে গেছি করণীয় কি?

পাসওয়ার্ড হল শব্দ বা বিভিন্ন অক্ষরের সমষ্টি যা ব্যবহার করা হয় ব্যবহারকারীর পরিচয় অথবা প্রবেশ অনুমোদন যাচাইয়ের কাজে যার মাধ্যমে ব্যবহারকারী নির্দিষ্ট জায়গায় প্রবেশাধিকার পায়। এই পাসওয়ার্ড হল গোপনীয় তাই এটি অন্য কারো কাছ থেকে গোপন রাখা হয়, তাদের প্রবেশ ঠেকাতে।
জানা যায়, পাসওয়ার্ডের ব্যবহার প্রাচীনকাল হতে। প্রহরীরা কারো প্রবেশ ঠেকাতে এটি ব্যবহার করত, প্রবেশকারী বা প্রবেশকারী দলকে সরবরাহ করা হত একটি পাসওয়ার্ড বা ওয়াচওয়ার্ড যা প্রবেশের সময় বলতে হত।

সূচিপত্র: পাসওয়ার্ড সংজ্ঞায়িত করুন বা আমার পাসওয়ার্ড ভুলে গেছি করণীয় কি? 

.

পাসওয়ার্ড সংজ্ঞায়িত করুন

আধুনিক সময়ে, ব্যবহারকারী নাম এবং পাসওয়ার্ড সাধারণভাবে ব্যবহার করা হয় লগইনের কাজে যা প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করে কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম, মোবাইল ফোন, ক্যাবল টিভি ডিকোডার, এটিএম, ইমেইল ইত্যাদিতে। 

একজন সাধারণ কম্পিউটার ব্যবহারকারী বিভিন্ন উদ্দেশ্যে পাসওয়ার্ড রাখতে পারেন যেমন: বিভিন্ন একাউন্টে লগইন করতে, ইমেইল দেখার জন্য বা উদ্ধারের জন্য, বিভিন্ন এ্যাপ্লিকেশনে প্রবেশের জন্য, ডাটাবেস, ওয়েব সাইট এবং এমনকি সকালের খবরের কাগজ অনলাইনে দেখার জন্যও। 

নাম দেখে যদিও মনে হয় তবুও পাসওয়ার্ড শব্দই হতে হবে এমন কোন কথা নেই। বস্তুত, পাসওয়ার্ড যেগুলো আসলে শব্দ নয় সেগুলো অনুমান করা কঠিন। কিছু পাসওয়ার্ড গঠন করা হয় বহু শব্দ ও অনেক কিছু মিলিয়ে যাকে ডাকা হয় পাসফ্রেজ বা শব্দ সমষ্টি। 

যখন গোপন তথ্যটি যদি সংখ্যাতাত্ত্বিক হয় যেমন পিন কোড যা এটিএমে ব্যবহৃত করা হয় সেগুলোকে কখনো কখনো পাসকোড বা পাসকি বলা হয়। পাসওয়ার্ড সাধারণত ছোট হয় যাতে তা সহজে মনে রাখা যায় এবং টাইপ করা যায়। 

বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান একটি পাসওয়ার্ড নীতি নির্দিষ্ট করে দেয় যা পাসওয়ার্ডের ব্যবহার ও সম্মিলনের ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয়। সাধারণত এজন্য সর্বনিম্ন দৈর্ঘ্য, প্রয়োজনীয় বিষয়শ্রেণী (বড় হাতের বা ছোট হাতের, সংখ্যা, বিশেষ অক্ষর), নিষিদ্ধ উপাদান (নিজের জন্মদিন, নাম, ঠিকানা, টেলিফোন নম্বর) প্রভৃতির হুকুম করা হয়। 

কোথাও কোথাও কিছু সরকারি সেবায় জাতীয় সত্যতা যাচাই কাঠামো[১] আছে যা ব্যবহারকারী যাচাইয়ের প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে, যেখানে পাসওয়ার্ডও প্রয়োজন হয়।

আমার পাসওয়ার্ড ভুলে গেছি করণীয় কি?

এত এত অ্যাকাউন্ট আমাদের ব্যবহার করতে হয় যে অনেক সময় একটি অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড ভুলে যাওয়াটা অস্বাভাবিক না। পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে আমরা সাধারণত ভয় পেয়ে যাই যে এখন মনে হয় অ্যাকাউন্টটা অচল হয়ে গেলো। কিন্তু না, আপনি চাইলে সহজেই পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে অ্যাকাউন্ট পুনরায় সচল করতে পারবেন। চলুন জেনে নেয়া যাক কীভাবে আপনি পাসওয়ার্ড রিকোভার করবেন।

ইমেইল অ্যাকাউন্ট

- জিমেইল অ্যাকাউন্ট খোলার সময় একটি রিকভারি ইমেইল এড্রেস এবং ফোন নাম্বার দিতে হয়।

- এই ইমেইল এড্রেস আপনার হতে পারে বা আপনার খুব কাছের কারো হতে পারে।

- আপনি যদি ইমেইলের পাসওয়ার্ড ভুলে যান তাহলে forget password এ ক্লিক করলে আপনার রিকোভারি ইমেইল এড্রেস এবং ফোন নাম্বার দেখাবে।

- যে মাধ্যমে আপনি পাসওয়ার্ড রিকোভার করতে চান সেই মাধ্যমে (মোবাইল ফোন বা ইমেইল) নির্বাচন করলে সেখানে একটি মেসেজের মাধ্যমে ভ্যারিফিকেশন কোড চলে যাবে।

- এই কোড ইনপুট দিলে নতুন করে পাসওয়ার্ড দেয়ার অপশন আসবে। নতুন করে পাসওয়ার্ড দিল।

-যদি আপনার সেকেন্ডারি ইমেইল এড্রেস না থাকে তাহলে ফোনের মেসেজে ভ্যারিফিকেশন কোড পাঠিয়ে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করতে পারবেন।
মাইক্রোসফট অ্যাকাউন্ট

- মাইক্রোসফট অ্যাকাউন্ট করার জন্য ইমেইল এড্রেস প্রয়োজন হয়। এই ইমেইল এবং পাসওয়ার্ড দিয়েই মাইক্রোসফট একাউন্টে লগইন করতে হয়।

- পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে forget password এ ক্লিক করে এই ইমেইলে ভ্যারিফিকেশন কোড পাঠিয়ে তারপর পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করতে পারেন।
ফেসবুক অ্যাকাউন্ট

- ফেসবুক অ্যাকাউন্টের সাথে ইমেইল এবং ফোন নাম্বার দুটোই যুক্ত থাকে।

- ফেসবুক অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে লগইন করার পেইজে Forgotten password? নির্বাচন করুন।

-তারপর ইমেইল বা মোবাইল নাম্বার দিলে সে নাম্বারে ভ্যারিফিকেশন কোড পাঠিয়ে পরিচয় যাচাই করা হয়।

- পরিচয় যাচাইয়ের পর নতুন পাসওয়ার্ড নির্বাচন করতে দেয়া হয়।
পাসওয়ার্ড ও অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত কিছু সতর্কতা –

১। অ্যাকাউন্ট তৈরির সাথে সাথে ব্যাক আপ ফোন নাম্বার এবং ইমেইল এড্রেস যুক্ত করুন।

২। পাসওয়ার্ড এমনভাবে নির্বাচন করুন যাতে ভুলে যাবার সম্ভাবনা কম থাকে।

৩। পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে রিকোভার করার পর পরবর্তী নিরাপত্তার জন্য অ্যাকাউন্টের স্যাটিংসে গিয়ে ব্যাক আপ ফোন নাম্বার এবং ইমেইল এড্রেস দিয়ে দিন।

৪। পাসওয়ার্ড রিকোভারের জন্য আরেকটা সুযোগ আছে তাকে বলে ‘ট্রাস্টেড কন্টাক’। এর মানে হচ্ছে আপনার কাছের কারো অ্যাকাউন্টের তথ্য বা ইমেইল এড্রেস আপনার একাউন্টে ট্রাস্টেড কন্টাক হিসেবে দিয়ে রাখলে অ্যাকাউন্ট রিকোভারের সময় তার একাউন্টে বা মেইলে ভ্যারিফিকেশন কোড পাঠিয়ে পাসওয়ার্ড নির্বাচনের সুযোগ দেয়া হবে।

পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে ভয় পাবার কিছু নেই। অ্যাকাউন্ট রিকোভার করা, পাসওয়ার্ড নতুন করে দেয়ার পদ্ধতি প্রায় সব ধরণের একাউন্টেই থাকে।

মোবাইল পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন

ফোনের পাসওয়ার্ড ভুলে গিয়েছেন? কী করবেন বুঝতে পারছেন না? একমাত্র উপায় রিসেট করা? কিন্তু এতে তো আপনার ফোনের সমস্ত ডেটা মুছে যাবে। তাহলে উপায় কী? অনেকেই এই সমস্যায় পড়েছেন একবার হলেও। প্যাটার্ন বা পাসওয়ার্ড ভুলে গিয়ে কী করবেন বুঝতেই পারেননি। 
সোজা ফোনটিকে রিসেট করে ফেলেছেন। আর তারপরেই দেখেছেন ফোনের কোনও ডেটা নেই। ছবি থেকে শুরু করে কনট্যাক্ট, সব কিছুই গায়েব। কিন্তু এটাতে আপনার বিপদ আরও বাড়িয়ে দেবে। আপনাকে এমন একটি উপায় জানানো হবে, যাতে আপনি খুব সহজেই ফোনটি খুলে ফেলতে পারবেন। তার জন্য রিসেট করার কোনও প্রয়োজন পড়বে না।

গুগল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করুন:

আপনার ফোনের পাসওয়ার্ড আনলক করার সবচেয়ে সহজ উপায় হল গুগল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা। যদি আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনটি গুগল অ্যাকাউন্টের সঙ্গে লিঙ্ক করা থাকে, তবেই আপনি ব্যবহার করতে পারবেন। এবার আপনার মনে প্রশ্ন আসতেই পারে, আপনি কীভাবে বুঝবেন যে ফোনটি গুগল অ্যাকাউন্টের সঙ্গে লিঙ্ক করা রয়েছে কি না। 

এর সহজ উপায় হল আপনি যদি পাঁচবার ভুল পাসওয়ার্ড দেন, তাহলে আপনি Forgot Your Password অপশন দেখতে পাবেন। তারপরে আপনি এখান থেকে আপনি ইমেইল আইডির সাহায্যে পাসওয়ার্ড রিসেট করতে পারবেন। পরে ফোনে নতুন পাসওয়ার্ড দিন এবং ফোন আনলক হয়ে যাবে। যদি লিঙ্ক করা না থাকে, তাহলে এমন অপশন পাবেন না। কিন্তু তারপরে আরও একটি উপায় আছে।

আরও একটি উপায় আছে

আপনি অ্যান্ড্রয়েড ফোন আনলক করতে, আপনি গুগল Find My Device-এর সাহায্যও নিতে পারেন। চুরি যাওয়া এবং হারিয়ে যাওয়া ফোন খুঁজে পেতেও এই অ্যাপটি ব্যবহার করা হয়। অ্যাপটির সাহায্যে আপনি ফোনটি সাইলেন্ট থাকলেও রিং অপশন করে নিতে পারবেন। শুধু তাই নয়, ফোনের ডাটাও মুছে ফেলতে পারবেন। 

চাইলে আপনার ফোন লকও করতে পারবেন। তবে আপনার ফোনে থাকা একই ইমেল আইডি দিয়ে ফাইন্ড মাই ডিভাইসে লগইন করতে হবে। আপনি যদি পাসওয়ার্ড ভুলে যান, তবে আপনাকে এই অ্যাপ বা ওয়েবসাইটের সাহায্যে আপনার ইমেল আইডি দিয়ে লগইন করতে হবে। এর পরে আপনাকে ডিভাইসটি সিলেক্ট করতে হবে এবং লক ডিভাইসে ট্যাপ করতে হবে। এবার আপনি এখানে লক অপশনে একটি নতুন পাসওয়ার্ড তৈরি করতে পারবেন। সেই নতুন পাসওয়ার্ড দিয়ে ফোনটি আনলক করুন। তাই যদি মনে হয় গুগল অ্যাকাউন্টের সঙ্গে লিঙ্ক করা নেই। তাহলে চিন্তার কোনও কারণ নেই।

আমাদের শেষ কথা

প্রিয় পাঠক, ইতিমধ্যে পাসওয়ার্ড সংজ্ঞায়িত করার নিয়ম, আপনার পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে করণীয় কি? মোবাইল পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে করণীয় কি এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর গুলো আপনারা খুঁজে থাকেন। তাই আপনাদের কথা বিবেচনা করে উপরোক্ত বিষয়গুলো আলোচনা করেছি।

আশা করছি, ইতিমধ্যে পাসওয়ার্ড সংজ্ঞায়িত করার নিয়ম এবং আপনার পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে করণীয় কি তা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আর এখনো যারা জানতে পারেননি তারা আমাদের আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পরে জেনে নিন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url