দ্রুত হাই প্রেসার কমানোর উপায় ও হাই প্রেসার এর লক্ষণ কি কি?
প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলটি মূল আলোচনার বিষয় হচ্ছে দ্রুত হাই প্রেসার কমানোর উপায় ও হাই প্রেসার এর লক্ষণ কি কি? সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। তার সাথে থাকছে হাই প্রেসার থেকে মুক্তি পাওয়ার সকল উপায় আজকে পোস্টটিতে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
আপনি অথবা আপনার পরিবার কেউ যদি হাই প্রেসার এর রোগী হয়ে থাকেন তাহলে আজকের পোষ্টটি আপনার জন্য, কেননা আজকের পোস্টে থেকেই আমরা হাই প্রেসার সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য জানবো। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক দ্রুত হাই প্রেসার কমানোর উপায় ও হাই প্রেসার এর লক্ষণ কি কি?
সূচিপত্র: দ্রুত হাই প্রেসার কমানোর উপায়
.
দ্রুত হাই প্রেসার কমানোর উপায়
দ্রুত হাই প্রেসার কমানোর উপায় সম্পর্কে আমাদের সবাইকে অবগত থাকতে হবে। কারণ বিশ্বজুড়ে উচ্চ রক্তচাপের একটি নিরব ঘাতক হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশ ও বিপুল সংখ্যক মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে। এসব রোগীর যেকোনো সময়ে প্রেসার বেড়ে যাওয়ার সমস্যায় ভোগেন। জটিল এবং পরিস্থিতিতে দ্রুত হাই প্রেসার কমানোর কিছু নিয়ম জেনে রাখা সকলেরই উচিত।
হাইপারট্রেশন বা হাই প্রেসার কে বাংলায় উচ্চ রক্তচাপ বলা হয়। এটি একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। এটি তখনই ঘটে যখন ধমনীতে রক্তের অত্যাধিক চাপ করে। গবেষণাগার গবেষণা করে দেখা গিয়েছে যে দেশ প্রতি পাঁচজনে অন্তত একজন রক্তচাপে ভুগছেন। তবে ৫৯ শতাংশ রোগী জানেন না যে তারা গুরুতর এ সমস্যায় আক্রান্ত।
চিকিৎসা শাস্ত্রে, স্বাভাবিক রক্তচাপ হলো ১২০/৮০ মিলিমিটার পারদ চাপ আপনারা এর আগে জেনে এসেছেন। তবে রক্তচাপ যখন এর বেশি যেমন ১৪০/৯০ মিলিমিটার পারো চাপের বেশি হয়, তখন ওই অবস্থা কে উচ্চ রক্তচাপ বলা হয়। আগের পাটে জানতে পেরেছেন। উচ্চ রক্তচাপা হাইপারট্রেশন কে অনেক সময় অনেকেই প্রেসার হিসাবে অভিহিত করেন।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, হাই প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের সব সময় সতর্ক থাকতে হবে। কেননা এই রোগীটির অন্যান্য রোগের নানান জটিলতা তৈরি কারণ। রক্তনালীর সমস্যা তৈরি করার পাশাপাশি স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের কারণও এই উচ্চ রক্তচাপ।
অথচ হাই প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা প্রায়ই খাওয়ার সময় বেমালুম ভুলে যান নিজেদের শারীরিক অসুস্থতার কথা। যার কারণে হাই প্রেসারের রোগীদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রেসার নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যায়। তাই আসুন জেনে নিই হঠাৎ প্রেসার আরো বেড়ে গেলে দ্রুত তার নিয়ন্ত্রণের জন্য তাৎক্ষণিক করণীয় সম্পর্কে।
হঠাৎ প্রেসার বেড়ে গেলে করণীয়
১। হঠাৎ রক্তচাপ বেড়ে গেলে শারীরিক চলাচল কমিয়ে দিন। কেননা, এতে রক্তের চাপ আরো বেড়ে যায়।
২। রক্তচাপ কমাতে খেতে পারেন তেতুলের রস। তেতুলের রসের পরিবর্তে খেতে পারেন লেবুর পানি।
৩। আপনার খাদ্য তালিকায়া আদা রাখুন। আদা একটি সুপার ফুড। এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে ও বেশি শীতল করে।
৪।. রক্তচাপ বেড়ে গেলে প্রক্রিয়াজাত ও তৈলাক তো খাবার এড়িয়ে চলুন। সেই সঙ্গে চর্বিযুক্ত খাবার, খাবারের লবণ, ধূমপান উচ্চ রক্তচাপে ঝুঁকি বাড়ে এমন খাবারও এড়িয়ে চলুন।
৫। এ সময় চিনি, তেল, ঘি, মাখন ও রেডিমেট একেবারে খাওয়া যাবে না।
উক্ত বিষয়গুলো যদি মেনে চলতে পারেন তাহলে সহজেই আপনার দ্রুত হাই প্রেসার কমানো যাবে।
হাই প্রেসার এর লক্ষণ কি কি?
হাই প্রেসার বলতে সাধারণত আমরা উচ্চ রক্তচাপকে বুঝে থাকি। হাই প্রেসার এমন একটি শারীরিক সমস্যা যেখানে আমাদের রক্তনালী গুলোর উপর রক্ত প্রবাহের অনেক চাপ হয়। হাই প্রেসার এর জন্য হৃদপিণ্ড এবং রক্তনালীতে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে যা আমাদের শারীরিক নানা রকম সমস্যার কারণ হতে পারে।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের স্বাভাবিক রক্তচ ১২০/৮০ mmHg হয়ে থাকি। ১২০/ ৮০ mmHg রক্তচাপকে আমরা স্বাভাবিক রক্তচাপ ধরে থাকি এর চেয়ে বেশি রক্তচাপকে সাধারণত হাই প্রেসার বলি। রক্তচাপ যদি ১৪০ বা তার বেশি হয় ডায়ালোস্টিক চাপ যদি ৯০ বা তারও বেশি হয় তাহলে সে ব্যক্তির উচ্চ রক্তচাপ বা হাই প্রেসার রয়েছে বলে বিবেচনা করা যায়। আজকের আলোচনা বিষয় হচ্ছে হাই প্রেসার এর লক্ষণ কি কি? চলুন আর দেরি না করে মূল ট্রফি কে যাওয়া যাক।
হাই প্রেসার এর ঝুঁকি
১। হৃদরোগ
২। স্ট্রোক
৩। চোখের ক্ষতি
৪। কিডনির সমস্যা
৫। ধমনী ক্ষতিগ্রস্ত
৬ হঠাৎ হার্টফেইল
হঠাৎ হাই প্রেসারের কারণে উপরোক্ত স্বাস্থ্য ঝুঁকিগুলো হতে পারে। উপরোক্ত সমস্যাগুলো সাধারণত হাই প্রেসারের লক্ষণ হিসেবে প্রকাশ পায়। উপরিক্ত সমস্যাগুলো ব্যতীত হাই প্রেসারের কিছু সাধারণ লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়।
হাই প্রেসারের লক্ষণ
১। শ্বাসকষ্ট
২। মাথাঘোরা
৩। হৃদস্পন্দনের পরিবর্তন
৪। মেজাজ পরিবর্তন হওয়া
৫। তীব্র মাথাব্যথা অনুভব করা
৬। ক্লান্তি ও বিভ্রান্তি
৭। বুকে ব্যথা বা অস্বস্তি করা
৮। অল্প কিছুতেই হাইপার হয়ে যাওয়া
৯। দৃষ্টিশক্তিতে সমস্যা
১০। নাক থেকে রক্ত পড়া
১১। ঘাড় বা কাঁধের ব্যথা
১২। শরীরের অস্থিরতা বৃদ্ধি পাওয়া
১৩। অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়া
১৪। অনিয়মিত হৃদস্পন্দন
১৫। ঘুমের সমস্যা
১৬। পেশিতে দুর্বলতা বা অবশ হওয়া
উপরিক্ত লক্ষণগুলো একজন হাই প্রেসারের রোগীর শরীরে প্রকাশ পায়। উক্ত লক্ষণগুলো ছাড়াও আরো নানা ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। আবার হাই প্রেসার এর ক্ষেত্রে কোন কোন সময় কোন লক্ষণই প্রকাশ পায় না। তাই এই বিষয়ে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
হঠাৎ হাই প্রেসার কমানো ঘরোয়া উপায়
প্রিয় পাঠক ইতিমধ্যে আলোচনা করা হয়ে গিয়েছে দ্রুত হাই পেশার কমানো উপায় ও হাই প্রেসার এর লক্ষণ কি কি? এবার আমরা জানতে পারবো হঠাৎ হাই প্রেসার কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে যাতে আমরা সহজেই হাই প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। যদি ঘরোয়া উপায়ে হাই পেশার কমাতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে। ঘরোয়া উপায়ে হাই প্রেসার কমানোর কিছু নিয়ম তুলে ধরা হলো :
১। নিয়মিত শরীরচর্চা করুন
২। স্বাস্থ্যকর খাবার খান
৩। স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপন করুন
৪। দিনে কমপক্ষে ছয় থেকে সাত ঘন্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন
৫। ধূমপান এবং মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন
৬। প্রতিদিন হালকা গরম এক কাপ দুধ খেতে পারেন
৭। অধিক তেল বা চর্বিজাতীয় খাবার গ্রহন করা থেকে বিরত থাকুন
৮। খাদ্য তালিকায় কাঁচা লবণ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। ( প্রয়োজনে ভেজে খান)
৯। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় প্রচুর শাকসবজি ( পালংশাক, লালশাক, লাউ, কদ, কুমড়া, বেগুন) খান।
১০। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত পটাশিয়াম জাতীয় খাবার খেতে পারেন।
১১। ছোট ছোট মাছ খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
১২। প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় কিছু ফলমূল যেমন আমলকি, বেদেনা, নাশপতি, পেয়ারা, কলা, ডাব ইত্যাদি রাখুন।
উপরোক্ত কাজগুলো নিয়মিত করলে এই দৈনন্দিন জীবনের পরিবর্তে আনলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তাই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ অর্থাৎ ঘরোয়া উপায় হাই-প্রেশার কমানোর জন্য উপরোক্ত নিয়ম গুলো অনুসরণ করুন। জরুরী প্রয়োজনে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিন।
হাই পেশার কমানোর খাবার
হাই প্রেসার কমানোর জন্য খাদ্য তালিকা কিছু কিছু খাবার যোগ করতে হবে এবং কিছু কিছু খাবার বাদ করতে হবে। খাবারের জন্য হাই পেশার হয়ে থাকে তাই হাই প্রেসার কমানোর জন্য খাদ্য তালিকা পরবর্তী আনা অত্যন্ত জরুরী। তাই এখন আমরা জানবো হাই প্রেসার কমানোর খাবার সম্পর্কে।
কোন কোন খাবার খাবেন
১। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি রাখুন। শাকসবজির মধ্যে রয়েছে লালশাক, পালংশাক, ফুলকপি বাঁধাকপি লাউ টমেটো মটরশুটি কলমি শাক শসা বেগুন কুমড়া ইত্যাদি।
২। অতিরিক্ত তৈলাত্বক মাছ পরিহার করে ছোট ছোট মাছ খান।
৩। প্রতিদিন অন্তত একটি করে ফল খান যেমন বেদেনা পেঁপে পেয়ারা নাশপাতি আমলকি আপেল ইত্যাদি।
৪। প্রতিদিন ঘুমানোর পূর্বে এক কাপ হালকা গরম দুধ খাওয়ার অভ্যাস করুন।
৫। পটাশিয়াম হাই প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করে তাই পটাশিয়াম জাতীয় খাবার নিয়মিত খান। কিছু কিছু পটাশিয়াম জাতীয় খাবার যেমন ডাবের পানি টমেটো কলা ইত্যাদি।
৬। দিনে অন্তত ৮ থেকে ১০ গ্লাস ঠান্ডা পানি করুন। ঠান্ডা পানি আমাদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
৭। সর্বপরি স্বাস্থ্যকর এবং শান্ত শিষ্ট পরিবেশে জীবন যাপন করার চেষ্টা করুন।
কি কি খাবেন না
১। ভাজাপোড়া ফাস্টফুড জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
২। কাঁচা লবণ একবারে খাবেন না। খাবারে নির্দিষ্ট পরিমাণে কাঁচা লবণ ব্যবহার করুন।
৩। চর্বি জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে দূরে থাকুন। চর্বিজাতীয় কিছু খাবার হল মাখন খাসির মাংস গরু কেক ইত্যাদি।
৪। প্যাকেট করা খাদ্য খাওয়া থেকে বিরত থাকুন
৫। ধূমপান, মদপান থেকে বিরত থাকুন।
৬। অতিরিক্ত ভাত না খেয়ে ভাতের পরিবর্তে রুটি খেতে পারেন।
৭। অতিরিক্ত কোলেস্টেরল জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
আমাদের শেষ কথা
উপরোক্ত তথ্য থেকে আমরা জানতে পারলাম দ্রুত হাই প্রেসার নিয়ন্ত্রণ করার উপায় লক্ষণ কি কি, হঠাৎ হাই প্রেসার হলে করনীয় কি ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত। আর যদি না জেনে থাকেন তাহলে আমাদের পোস্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পরে জেনে নিন।
সবশেষে বলবো পোস্টটি ভালো লাগলে হলদি আমাদের ওয়েবসাইটটির সাথে থাকবেন। আর যে কোন প্রয়োজনীয় তথ্য জানার থাকলে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url