অর্জুন গাছের ছাল ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা

অর্জুন গাছের ছাল ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে আজকের পোস্ট। অর্জুন গাছ হল একটি ওষুধে গাছ যা ভারতে বহুল ব্যবহৃত হয়। এর ছালে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
অর্জুন গাছের ছাল হৃদপিন্ডের জন্য খুবই উপকারী, একটি টনিক কি সবাই ব্যবহৃত হয়। একটি কোলেস্টেরলের মাত্রা কমতে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং হৃদপিন্ডের বেশি গুলোকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করতে পারে। তাই দেরি না করে চলুন জেনে নেওয়া যাক অর্জুন গাছের ছাল ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে।

সূচিপত্র: অর্জুন গাছের ছাল ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা

.

মূমিকা

প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেল এর মধ্যে তুলে ধরা হবে অর্জুন গাছের ছাল ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা, এই ছাল সেবনের ফলে আপনারা কি কি উপকারিতা পাবেন, আরো জানতে পারবেন অর্জুন গাছের ছালের গুড়া খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে, এবং অর্জুন ফলের পাঁচটি উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারবেন। তাই আর দেরি না করে চলুন উপরোক্ত বিষয়গুলো জেনে আসা যাক।

অর্জুন গাছের ছাল ভিজিয়ে খাওয়ার উপকারিতা

অর্জুন গাছ, জাতে পেয়ারা গাছের অনুরূপ পাতা রয়েছে কিন্তু এটি আকারে অনেক বড়, এর বৈজ্ঞানিক নাম হল: টার্মিমিনেলিয়া অর্জুন। বিভিন্ন অঞ্চলে, এটি ধাওয়াল, কুকুভ এবং নাদিসারজ নামে পরিচিত। অর্জুন গাছ চিরহরিৎ বৃক্ষ। বোঝানো ওষুধে গাছের মধ্যে একটি অন্যতম গাছ হল অর্জুন গাছ। 

এটি প্রাচীনকাল থেকেই হৃদ রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়েছে। অর্জুনের গাছের ছাল পাউডার, ডিকোশন, স্কুর ইত্যাদি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অতএব আমাদের অর্জুন গাছের ছালের সুবিধা ও অসুবিধা কি কি তা জানা দরকার।

* অর্জুনের ছাল উচ্চ রক্তচাপ কমায়:

অর্জুন গাছের সাল বেশি উপকারী বলে প্রমাণিত হয়েছে। আসলে তার বাকল, লিপিড ট্রাইগ্লাসারাইড স্তর হ্রাস করার মাধ্যমে কোলেস্টেরলের হ্রাস করে। এই ছালের সেবন রক্ত প্রবাহের বাধা দূর করে। এর জন্য, অর্জুন গাছের ছালের এক চামচ পাউডার, দুই গ্লাস জলে অর্ধেক রয়ে যাও পর্যন্ত গরম করে সকালে ও সন্ধ্যায় পান করা উচিত। এইভাবে বন্ধ ধমনী খুলবে এবং কোলেস্টরলের মাত্র হ্রাস হবে।

* উন্নত চুলের জন্য:

চুলের বৃদ্ধির জন্য আমরা অর্জুন গাছের ছাল ব্যবহার করতে পারি। মাথার চুলের মতো অর্জুনের গাছের ছাল এবং হেনার মিশ্রণে চুলের লাগালোর ফলে চুল সাদা থেকে কালো হয়। একই সাথে এটা চল শক্তিশালী করে।

* কাশির উপশমে:

শুকনো অর্জনের কাছে ছালের পাউডার, তাজা সবুজ ছোট পাতা রসের সাথে মিশিয়ে দিয়ে আবার শুকিয়ে নিন এভাবেই সাতবার মেশানোর পর যা অবশিষ্ট থাকে তা দিয়ে চূর্ণ প্রস্তত করা হয়। এর সাথে মধু দিয়ে রোগীকে সেবন করালে তিনি আরাম অনুভব করবেন।

* মেঘ দূর করতে :

অতিরিক্ত মেদ নিয়ে সমস্যায় ভোগা মানুষের প্রত্যহ সকাল, সন্ধ্যায় অর্জুনের গাছের ছালের মিশ্রণ পান করলে তাদের সমস্যা কমে যেতে পারে অনেকটাই। এটি এত দ্রুত কাজ করে যে মাত্র এক মাসের মধ্যেই আপনি আপনার মেদের উপরের প্রভাব অনুভব করতে পারবেন।

* মধুমেহের (সুগার) উপশমে:

মধুমেহ রোগীর অর্জুন গাছের ছাল দিয়ে তাদের সমস্যা ও শেষ করতে পারে। এর জন্য অর্জুন গাছের ছালের পাউডার দেশি জাম বীজের চূর্ণ সমান পরিমাণে মিশিয়ে ঘুমের আগে উষ্ণ জল সহযোগী পান করুন। 

দ্বিতীয় বিকল্প হল অর্জুন গাছের ছাল, কদম গাছের ছাল, জামুন গাছের ছাল ও পার্সলে এক সমান পরিমাণে মিশিয়ে এবং ভালো করে কুড়িয়ে পাউডার বানিয়ে নিন। ডিকোকেশনের জন্য অর্ধ লিটার জল যোগ করুন এবং সকালে তিন সপ্তাহ ধরে এই মিশ্রণটি ধারাবাহিকভাবে ব্যবহার করুন। এটি আপনাকে মধুমেহ থেকে পরিত্রাণ করতে পারে।

* ত্বকের জন্য:

অর্জুন গাছের ছালের প্রভাব অনেক ত্বকের সমস্যা দূর করতে কার্যকর। অর্জুন গাছের ছাল, বাদাম, হলুদ এবং কর্পূর সমান পরিমাণ মিশিয়ে, পিষ্ট করে, ত্বকের ওপর প্রয়োগ করলে, মুখের সমস্ত বলিরেখা দূর হয় এবং মুখের ত্বক উজ্জ্বল করে হয়।

* মুখের ফোস্কার চিকিৎসায়:

মুখের ফুস্কার দ্বারা বিরক্ত ব্যক্তি অর্জুনের ছাল ব্যবহার করতে পারেন। এর জন্য, নারকেল তেলের সাথে অর্জুনের ছালের চূর্ণ যোগ করে তা আপনার মুখের ফুসকার ওপর প্রলেপ রূপে লাগান আপনি কষ্ট থেকে অবশ্যই অপসন পাবেন। শুধু তাই নয়, এই মিশ্রণ অল্প গুড় সহযোগে সেবন করলে জ্বর থেকেও মুক্ত পাওয়া যায়।

* প্রস্রাবের বাধা দূর করে:

অর্জুন গাছের ছাল দিয়ে তৈরি পানীয়, প্রস্রাবের বাধা দূর করে। এজন্য, অর্জুনের গাছের ছাল পিষ্ট করুন এবং দুই কাপ জলে ফোটান। যখন পানি অর্ধেক হয়ে আসবে, তখন তা ঠান্ডা করতে দিন। এরপর ঠান্ডা হওয়ার পরে রোগীরে পান করান। তিনি একবার খাওয়ানো হলে, এটি প্রস্রাবের বাঁধা দূর করবে ।

* প্রদাহ হ্রাস করা:

অর্জুন গাছের বাকলও কিন্তু ইতিবাচক ভূমিকায় রেখে থাকে। এর জন্য, অর্জুনের গাছের ছাল পিষ্ট করে তার মিহি গুড়ো খরিপাক পদ্ধতিতে ৫ থেকে ১০ গ্রাম পরিমাণে রোগীকে খাওয়ানো হলে, কার্ডিওভাসকুলার রোগের পাশাপাশি হৃদ রোগের ঘটনা হ্রাস পায়। এছাড়াও প্রায় এক থেকে তিন গ্রাম পরিমাণে পাউডার খেলে প্রদাহ হ্রাস পায় এবং তার সাথে সম্পর্কিত সমস্যা ও চলে যায়।

* হৃদয়ের ব্যাধিক নিরাময়ে:

অর্জুন গাছের ছাল অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, প্রদাহ ইত্যাদির মত হৃদরোগ সংক্রান্ত সমস্ত সমস্যা দূর করতে সহায়হোক। এটি স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস করে। অর্জুন গাছের ছালের সাথে বন্য পেঁয়াজ একই পরিমাণে মিশিয়ে চূর্ণ বানান এবং চূর্ণের অর্ধেক চা চামচ হাটের রোগীকে প্রতিদিন দুধ সহযোগী পান করানো হলে হৃদয়ের বেশি শক্তিশালী হবে। 

এটা হাট ব্লকেজের প্রতিরোধের জন্য উপকারী। খাবার খাওয়ার পর প্রায় দুই চাচা চামচ বা প্রায় ২০ মিমি অর্জুনারিষ্ট অর্ধেক কাপ জলে মিশে দুই তিন মাস পান করলে প্রায় সব রকমের শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

অর্জুন ছালের গুড়া খাওয়ার নিয়ম

অর্জুন গাছের ছাল বেশি উপকারী বলে প্রমাণিত হয়েছে। আসলে তারা বাকল, লিপিড ট্রাইগ্লিসারাইড স্তর হ্রাস করার মাধ্যমে কোলেস্টেরল হ্রাস করে। এই সালের সেবন রক্ত প্রবাহের বাধা দূর করে। এর জন্য, অর্জুন গাছের ছাল এক চামচ পাউডার, ২ ক্লাস চলে অর্ধে রয়ে যাওয়ার পর্যন্ত গরম করে সকালেও সন্ধ্যায় পান করা উচিত। 

এবার জানবো অর্জুন সালের গুড়া খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। যাদের বুক ধড়ফড় করে অথচ হাই ব্লাডপ্রেসার নেই, তাদের পক্ষে অর্জন চালের গুড়া কাঁচা হলে ১০ থেকে ১২ গ্রাম অথবা শুকনো হলে পাঁচ থেকে ছয় গ্রাম একটু থেতো করে, আদাব পোয়া দুধ আর আধাসের পানি একসঙ্গে সিদ্ধ করে, আন্দাজ আদাপোয়া থাকলে নামিয়ে, ছেকে বিকেলের দিকে খেতে হয়। 

তবে গরম অবস্থায় এই সিদ্ধ দুধটা থেকে রাখা ভালো। এর ধারা বুক ধরফরানি নিশ্চয়ই কমবে। তবে পেটে বায়ু না হয় সে দিকটাও লক্ষ্য রাখতে হয়। লোভ ব্লাডপ্রেসার উপরোক্ত পদ্ধতি তৈরি করে খেলে প্রেসার স্বাভাবিক হয়। মাঝে মাঝে কারণ বা অকারণ রক্ত ওঠে বা পরে, সেই ক্ষেত্রে ৪-৫ গ্রাম চাল রাত্রিতে ভিজিয়ে রেখে ওটা সকালে থেকে নিয়ে পানিটা খেতে হয়। 

শ্বেত বা রক্তপ্রদারে উপরোক্ত মাত্রা মতো ছাল ভিজানো পানি আদা চামচ আন্দাজ কাঁচা হলুদের রস মিশিয়ে খেতে উপশম হয়। অর্জুন সালের গুড়া বাসক পাতার রসে ভিজিয়ে, সেটা শুকিয়ে (অন্তাতঃ সাতবার) নিয়ে রাখতে হবে। দমকা কাশি হতে থাকলে একটু ঘিও মধু বা মিছিরির গুঁড়ো মিশিয়ে খেতে হবে। 

অর্জুন সালের গুডা চার থেকে পাঁচগ্রাম আধা পোয়া আন্তাজ অনুযায়ী গরম পানিতে চার থেকে পাঁচ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। তারপর থেকে ওই পানিতে আন্তাজ এক চামচ শ্বেতচন্দন ঘষা মিশিয়ে খেয়ে উপকার পাওয়া যাবে। যাদের ইস্তিঞ্জার (প্রস্রাবের) সঙ্গে PUSCELL বা পুঁজ বেশি যায়, তার তিন থেকে চার গ্রাম শুকনো অর্জুন ছালা আধ পোয়া গরম পানিতে চার থেকে পাঁচ ঘন্টা ভিজিয়ে পড়েছে কে তার সঙ্গে একটু রান্না করা বার্লি মিশিয়ে খেলে তা সেরে যাবে।

অর্জুন ফলের ৫টি উপকারিতা

অর্জুন ফল একটি ওষুধের কাছ থেকে আসে যা আপনাকে অনেক রোগ থেকে পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে, এখানে এই ফল খাওয়ার কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। এটা সব সময় বলা হয়েছে যে সুস্থ থাকতে আপনার খাদ্য তালিকায় আরোফল যোগ করতে হবে। 

এগুলোতে ক্যালরি কম এবং পুষ্টির মান বেশি যা অনেক সুবিধা প্রদানে সহযোগিতা করে। বিভিন্ন ধরনের ফলের আপনার স্বাস্থ্যের জন্য বিভিন্ন উপকারিতা রয়েছে তবে এটি বিভ্রান্তিকর হয়ে ওঠে যে আপনারা আসলে কোন ফল খাওয়া উচিত। 

অর্জুন ফল আয়ুর্বেদে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত এবং খাওয়া হয়, এটি অর্জুন গাছ থেকে আসে, যার বাকল গুলোতে ওষুধি প্রচুর গুণ রয়েছে যার রোগ নিরাময়ে সহায়তা করে। অর্জুন ফলের ব্যবহার প্রকৃত পক্ষে প্রতি দিনে অনেক স্বাস্থ্য সমস্যা কমাতে পারে এবং আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যর উন্নতি করতে পারি। আসুন জেনে নিই এই গরমে অর্জুন ফল খাওয়ার অন্যান্য স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে

1. নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ দূর করে

2. হার মজবুত করে

3. ত্বকের উন্নতি করে এবং আন্টি-এজিং এর মত কাজ করে

4. দাঁত ও মাড়ি সমস্যা কমায়

5. হার্ট রেট ছন্দ উন্নত করে

অর্জুন ফল প্রতিদিন সে মনের মাধ্যমে আপনি উপরোক্ত পাঁচটি সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পেতে পারে। উপরোক্ত সমস্যাগুলো হল জীবন যাত্রার অন্যতম সাধারণ সমস্যা অনেক ব্যক্তির সাথে ঘটে। অর্জুন ফলের মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে খুব সহজেই মুক্তি পেতে পারেন।

লেখকের শেষ বক্তব্য

অর্জুন গাছের ছাল ভিজে খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সঙ্গে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। যাতে করে আপনার অর্জুন ছালের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারেন এবং এটা ব্যবহার করার নিয়ম শিখতে পারেন।

আশা করছি ইতিমধ্যে আপনারা অর্জুন গাছের ছাল ভেজে খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমাদের লেখা যদি আপনার পছন্দ হয়ে থাকে তাহলে এমন পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ফলো দিয়ে আমাদের সাথেই থাকুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url