চিয়া বীজ কী? - চিয়া বীজ এর উপকারিতা কী কী?

আমরা সবাই চিয়া বীজ কে সুপারফুড হিসেবে চিনে থাকি। এই চিয়া বীজ আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। যেহেতু বর্তমানে অনেকেই স্বাস্থ্য নিয়ে দিন দিন অনেক বেশি সচেতন হচ্ছে, তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অনেক স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের চিয়া সিট খুব বেশি প্রয়োজনীয় মনে করে থাকেন।
চিয়া বীজে ফাইবার, প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর ফেট ও ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিডের পাশাপাশি অন্যান্য উপাদান থাকার কারণে যারা ওজন কমাতে চায়, তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ খাবার হতে পারে। ওজন কমাতে আমাদের কিছু নিয়ম পালন করতে হয়। কিন্তু, চিয়া এই চিয়া বীজ খেলেই যে ওজন একে বারে কমবে তা নয়। আমাদের খাওয়ার নিয়ম ভালাভাবে মেনে খেতে হবে, সাথে ডায়েট, শরীরচর্চার দিকেও বিশেষ নজর দিতে হবে।

সূচিপত্র: চিয়া বীজ কী? - চিয়া বীজ এর উপকারিতা কী কী?

.

চিয়া বীজ কী?

চিয়া বীজ বা চিয়া সিড মরুভূমিতে জন্মানোর সালভিয়া হিসপানিকা উদ্ভিদের বীজ। এই চিয়া বীজটিতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ রয়েছে এবং মানুষের শরীরের জন্য খুবই উপকারী উপাদান। বিজিটির আদি জন্মস্থান সেন্ট্রাল আমেরিকা এবং সেখানকার প্রাচীর আদিবাসী অ্যাজটেক জাতির খাদ্য তালিকায় এই বীজ অন্তর্ভুক্ত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। 

প্রাচীন মায়া এবং অ্যাজটেক জাতির মানবজী আসিফকে সোনার থেকেও মূল্যবান মনে করত। তারা বিশ্বাস করত এটা তাদের শক্তি এবং সহজ জোগাবে। চিয়া বীজ যেকোনো পরিবেশে সব ধরনের আবহাওয়া হয় এবং এতে পোকামাকড়ের আক্রমণের আশঙ্কা কম থাকে। চিয়া বীজ সাদা ও কালো রং এর এবং তিলের মতো ছোট সাইজের হয়। 

এখানে উল্লেখ্য যে চিয়া সিড এবং তোকমা নিয়ে একটি ভুল ধারণা আছে। অনেকেই তো তোমাকে ভুল করে চিয়া সিড ভেবে থাকি। চিয়া সিড তোমার যে সাইজের ছোট, তোক মারে ইংরেজি নাম ব্যাসিল সিড। চিয়া বীজ। হলসালভিয়া হিস্পানিকার ভোজ্য বীজ, পুদিনা পরিবারের একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ মধ্য ও দুঃখের মেক্সিকো তে চিয়া বীজ ডিম্বাকৃত এবং কালো এবং সাদা দাগ সহ ধূসর, যার ব্যাস প্রায় ২ মিলিমিটার ( ০.০৪ ইঞ্চি )।

চিয়া বীজের উপকারিতা কি কি?

চিয়া বীজের উপকারিতা কি কি? এবং স্বাস্থ্যর জন্য কতটা উপকারী এটা জানা আমাদের জন্য খুবই প্রয়োজ। চিয়া বীজ খাওয়ার ফলে আপনার বড় বড় সমস্যা গুলি দূর হতে পারে। চিয়া বীজ খেলে শরীরে হৃদরোগের ঝুকি ও করেস্টলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। 

চিয়া সিড রক্তে ব্লাড সুগারের মাত্রা স্বাভাবিক রাখে, যা ডায়বেটিসের ঝুঁকি কমায়। এছাড়াও যে এসিড শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করে, গ্যাসের সমস্যার কমাতে সাহায্য করে এবং ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি চুল, ত্বক ও নখ সুন্দর রাখতে সাহায্য করে। আপনাদের বোঝার সুবিধার্থে চিয়া বীজের উপকারিতা গুলো বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হলো -

1। চিয়া সিডে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে যা শরীরকে শক্তিশালী করে।

2। ব্লাড সুগারের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।

3। ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।

4। উচ্চ পরিমাণে ফাইবার, প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি ও শর্করা মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।

5। খাবারের আগ্রহ কমিয়ে দেয়, খুদা নিবারণ করে ও ওজন কমাতে সাহায্য করে।

6। কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফাইভারের ভালো উৎস হওয়ায় এই পুষ্টি উপাদান শরীরের শক্তি প্রদান করে।

7। শরীরের বেশী বৃদ্ধি, ক্ষতি মেরামত ও বেশি পুনরুদ্ধারের জন্য অপরিহার্য একটি প্রোটিনের উপাদান হচ্ছে চিয়া বীজ।

8। শতকরার মাত্রা শরীরের নিয়মিত প্রবেশের ফলে লম্বা সময় ধরে স্থিতিশীল শক্তি স্তর বজায় রাখে।

9। কাজ করার পরে ক্লান্তি দূর করতে ও স্ট্যামিনা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

10। কোলন ক্যান্সারের যোগী কমায় ও মলাশয় পরিষ্কার করে।

11। বদ হজম থেকে বাছায় এবং সঠিকভাবে হজম প্রক্রিয়াতে সাহায্য করে।

12। চিয়া বীজ মানব শরীরের মস্তিষ্কের কার্যকারিতার উন্নত করতে সাহায্য করে।

13। কাজের মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি ও একাগ্রত বজায় রাখতে সাহায্য করে থাকে।

14। পুষ্টিবিদদের মতে, স্যামন মাছের চেয়ে চিয়া বীজে প্রায় 8 গুণ বেশি পরিমাণে ওমেগা-3 ফ্যাটি এসিড রয়েছে।

15। চিয়া বীজ হৃদরোগের ঝুঁকি ও ক্ষতিকর বাজে কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।

16। মুরগির ডিম থেকেও তিনগুণ বেশি পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে চিয়া সিডে যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী।

17। দুধের চেয়েও চিয়া সিডে পাঁচগুণ বেশি ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় যা শরীরের হারকে মজবুত করে হারের স্বাস্থ্যরক্ষা করে।

18। হাটু ও জয়েন্টের ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে।

19। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পদার্থ শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে, যা ব্যায়ামের পরে বেশির ব্যথা ও ক্লান্তি দূর করে।

20। এই বীজ ম্যাগনেসিয়াম ও শরীরের শিথিলকরণ প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। ট্রিপ্টোফ্যান একটি অ্যামিনো এসিড যা সেরোটোনিনে রূপান্তরিত হয় এবং মেজাজ নিয়ন্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

21। ত্বক,চুল ও নখ সুন্দর রাখতে বিশেষভাবে যত্ন নিতে মধু ছাড়া চিয়া সিডের বিকল্প খুব কমই রয়েছে।

ওজন কমাতে চিয়া সিট খাওয়ার নিয়ম

ওজন কমতেছে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আপনাদের হয়তো বা তেমন কোন ধারণা নেই। আপনারা আমাদের কাছে একটি প্রশ্ন করে থাকেন যে চিয়া বীজ বা চিয়া সিড খেলে কি ওজন কমে? হ্যাঁ। চিয়া সিড খেলে অবশ্যই ওজন কমবে। কারণ, এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা হজমে সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে ও ক্ষুদা নিয়ন্ত্রণ করে। 

অ্যাসিড ও লেবুর মিশ্রণ শরীরের অতিরিক্ত চর্বি দূর করে মেটাবলিক সক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে যা আপনার শরীরের ওজন কমানোর জন্য খুবই উপকারী। এছাড়াও, লেবু আমাদের দেহের চর্বি কাটাতে সাহায্য করে বিদায় দুটো একসাথে খেলে অতিরিক্ত ওজন কমানো যায়। 
তবে আমাদের প্রতিদিন নিয়মিতভাবে সঠিক নিয়ম অনুসারে খেতে হবে, সাথে ব্যায়াম ও খাদ্য দেশের পরিবর্তন আনতে হবে। এতে করে আরো ভালো স্থায়ী সমাধান পাওয়া সম্ভব। চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম হিসেবে খালি পেটে এক গ্লাস পানির সাথে দুই চা চামচ চিয়া সিড এবং দুই চামচ লেবুর রস মিশিয়ে সকালে ও রাতে ঘুমানোর আগে খেলে দ্রুত ওজন কমাতে পারবে। 

চিয়া সিড পানিতে সাধারণ তাপমাত্রায় ৩০ মিনিট খাওয়ার আগে ভিজিয়ে রাখলে প্রোটিনের পরিমাপ বেশি থাকায় ক্ষুধার নিবারণ হবে এবং নিজস্ব স্বাদ না থাকায় চিয়া সিড যেকোনো শরবত, স্মুদি, টক দই, কাস্টার্ড বা অন্য খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। পুষ্টি বিশেষজ্ঞের মতে, সুস্থ থাকতে দৈনিক ১০০ গ্রাম করেছি চিয়া সিড খাওয়া উচিত। 

ওজন কমানোর জন্য যেমন প্রতিদিন ব্যায়াম করতে হয়, তেমনি ডায়েটেও চিয়া বীজ রাখার জন্য পুষ্টিবিদরা সব সময় পরামর্শ দিয়ে থাকেন। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এই চিয়া সিড ডায়েটারি ফাইবার পরিপূর্ণ থাকার ফলে আমাদের হজম ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। তাই, হজম ক্ষমতা বাড়ানোর ফলে শরীরের মেদ কমিয়ে ক্যালরির ঘাটতি পূরণ করে।

চিয়া সিড কিডনির জন্য কতটা ভালো?

চিয়া সিডে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে যা কিডনির স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো। এছাড়াও, চিয়া সিড ঢাকা ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে যা বাজে কোলেস্টলের কমাতে সাহায্য করে এবং কিডনির চাপ কমায়। 

এতে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট কিডনির কোষ গুলোকে ফ্রি র‍্যাডিকেলেরে এর ক্ষতি ক্ষতি থেকে রক্ষা করে ও উচ্চমাত্রায় ঢাকা প্রোটিন কিডনি টিস্যু মেরামতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত খেলে কিডনির কোন ক্ষতি হয় না। তবে, যারা ইতিমধ্যে কিডনির সমস্যায় ভুগছেন তাদের ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া জরুরি। 

কারণ চিয়া সিড পটাশিয়াম ও ফসফরাসের পরিমাণ বেশি থাকে বিধায় বেশি পরিমাণ খেলে বাজে প্রভাব ফেলতে পারে। শরীরে যদি ফসফরাসের মাত্রা বেড়ে যায়, তবে আর দুর্বল হয়ে যেতে পারে, হাইপারপ্যারাথাইরেয়েডিজম হতে পারে, এবং রক্তনালীতে ক্যালসিয়ামে জমতে পারেন। 

রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বেড়ে গেলে নানা ব্যধি যেমন মাংসপেশি দুর্বলতা, হৃদপিন্ডের সমস্যা, এমনকি প্যারালাইসিস পর্যন্ত হতে পারে। ফাইবারের পরিমাপ বেশি হওয়ায় এই অতিরিক্ত ফাইবার কিডনির রোগীদের জন্য হজমে সমস্যা তৈরি করে। ডাক্তার রক্ত জমাট বাঁধার কোন ওষুধ দেয়, তাহলে চিয়া সিড জেল সেই ওষুধের সাথে মিশে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। 

এজন্য যারা কিডনি রোগী রয়েছে তাদের খাওয়ার সময় নিয়মিত রক্তের ফসফরাস এবং পটাশিয়ামের মাত্রা পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত যাতে কোন সমস্যা না হয়। আপনি চাইলে বিকল্প হিসেবে চিয়া সিড এর পরিবর্তে বাদাম, আখরোট, কুমড়ার বীজ, তিল এবং তিল খেতে পারেন কারণ এতে ফসফরাস এবং পটাশিয়ামের পরিমাপ অনেকাংশে কম থাকে।

গর্ভাবস্থায় কি এসিড খাওয়ার নিয়ম

গর্ব অবস্থায় দিনে দুই তিন টেবিল চামচে চিয়া সিড এক কাপ পানিতে ১০ থেকে ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রেখে পানিসহ খেলে উপকার পাওয়া যাবে। ১০০ গ্রাম চিয়া সিড প্রায় ২০ গ্রাম পরিমাণ প্রোটিন থাকে, অর্থাৎ এক চামচের মোটামুটি তিন গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। ফলে এতে থাকা ক্যালরী ও আইরন গর্ভবতী মহিলাদের জন্য স্বাস্থ্যকর। 

সকালের নাস্তা, স্মুদি, ডেজার্ট অথবা সালাদের মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়। এটি একেবারে নিরাপদ। মায়েদের সন্তানের জন্য দুধ উৎপাদনের জন্য অতিরিক্ত ৫০০ ক্যালোরি শক্তির প্রয়োজন হয়। চিয়া সিডে প্রতি 28 গ্রাম প্রায় ১৩৮ ক্যালোরি সরবরাহ করে। 

তাই স্বাস্থ্যকর ক্যালরি পেতে চাইলে তাদের ডায়েটে চিয়া সিড যুক্ত করতে পারেন। এটি খেলে বুকের দুধের ডিএইচএ কন্টেন্ট বাড়াতে সাহায্য করে যা শিশুর মস্তিষ্কের সঠিক বিকাশের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।

আমাদের শেষ কথা

প্রিয় পাঠক ইতিমধ্যে চিয়া সিড কী? চিয়া সিডে উপকারিতা কী কী? আরো অনেক বেশি আলোচনা করা হয়ে গিয়েছে। আপনারা যারা চিয়া সিড সম্পর্কে জানেন না আজকের পোস্ট তাদের জন্যই। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে জেনে নিন চিয়া সিড কী? চিয়া সিড উপকারিতা কি কি?।

আশা করছি ইতিমধ্যে আপনারা চিয়া সিড কী? চিয়া সিডের উপকারিতা কি কি এই সকল বিষয়ে জানতে পেরেছেন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জানতে চাইলে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো দিয়ে আমাদের সাথেই থাকুন। (আসসালামুআলাইকুম )

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url