কোন ভিটামিনের অভাবে শরীর দুর্বল হয়ে যায় জেনে নিন

সুস্থ থাকার জন্য ভিটামিন ও খনিজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কোন ভিটামিনের অভাবে শরীর দুর্বল হয়ে যায় এই বিষয়টি আমরা কয়জনই বা জানি। শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য ভিটামিন খুবই প্রয়োজনীয় আর এটি তৈরি হয় দেহের ভিতরে। আমরা প্রতি দিন যে খাবার খাই সেই খাবার থেকে ভিটামিন ও খনিজ উপাদান পেয়ে থাকি।
খাবার থেকে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন আমরা পেয়ে থাকি কিন্তুু আমরা কয়জনই বা জানি কোন ভিটামিনের অভাবে শরীরের দুর্বল হয়ে যায় এবং সুস্থ থাকার জন্য আমাদের কোন ভিটামিন বেশি প্রয়োজন সেই সম্পর্কে অনেকেরি কেমন তেমন ধারণা নেই। চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন ভিটামিনের অভাবে শরীর দুর্বল হয়ে যায়।

ভূমিকা

প্রিয় পাঠক আজকে আমাদের আর্টিকেলের মধ্যে আলোচনা কোন ভিটামিন অভাবে শরীর দুর্বল হয়ে যায়,শরীরের দুর্বলতা কাটানোর উপায়, শরীরের দুর্বলতার ওষুধ এবং ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি এর অভাব কি হয় এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। আপনারা যারা এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তেমন কোনো ধারনা নেই অনলাইনে নানা জায়গায় খুঁজছেন আমাদের এই আর্টিকেল শুধু তাদের জন্যই। মনোযোগ সহকারে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে উপরোক্ত বিষয়ে জেনে নিন।

কোন ভিটামিনের অভাবে শরীর দুর্বল হয়ে যায়

শরীরের সুস্থ রাখতে ভিটামিন ও খনিজ এর ভূমিকা অপরিসীম যা বলে প্রকাশ করা যায় না। আমরা প্রতিদিন নিয়মিত নানা ধরনের পুষ্টিকর খাবার খেয়ে থাকি। এই পুষ্টিকর খাবার থেকে আমরা শরীরের গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন খুনিজ উপাদানগুলো সংরক্ষণ করে থাকি। 

নানা ধরনের পুষ্টিকর খাবার থেকে যেসব ভিটামিন পাওয়া যায় তার মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন হলো ভিটামিন বি ১২। এই ভিটামিন টি অন্যান্য ভিটামিনের মত শরীরে তৈরি হয় না। ভিটামিন বি১২ মানবদেহ রক্ত কোষ এবং ডিএন তৈরীর ক্ষেত্রে ভিটামিন বি ১২ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। 

মানবদেহে যখন ভিটামিন বি ১২ অবভয় হয় তখন মানুষের ভুলে যাওয়ার প্রবণতা, দুর্বলতা, মাথা ঘোরা, দুশ্চিন্তা, বিষণ্নতা ইত্যাদি সমস্যা হয়ে থাকে। ভিটামিন বি ১২ এর অভাবে শরীরের রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে। তাছাড়া ভিটামিন বি১২ এর অভাবে রোগী দুর্বল হয়ে পড়ে, হাপিয়ে উঠে, অল্প শ্রমেই ক্লান্তি চলে আসে, বুক ধরফড় করে। 

মানব দেহের যে পাকস্থলীর জনিত সমস্যা ঝুঁকি বাড়িয়ে দেই ভিটামিন বি ১২ তার সাথে হতে পারে কোষ্ঠকাঠিন্য। আমাদের দীর্ঘদিন যদি ভিটামিন বি ১২ অভাব থাকে তাহলে স্নায়বিক সমস্যা হতে পারে। ফলে চলাফেরার ক্ষেত্র ভারসাম্য রাখতে অসুবিধা হয়। 

ভিটামিন বি ১২ পানিতে দ্রবণীয় উপাদান। যখন মানবদের চাহিদা পূরণ হয়ে যায় তখন এই অতিরিক্ত ভিটামান মূত্রের সাথে দেহের বাহিরে বের হয়ে আসে। সাধারণত মানুষের বয়সের উপরে ভিত্তি করে এই চাহিদা কম বেশি হয়ে থাকে। মানব দেহে সারা দিন ক্লান্তি লাগে ও দুর্বলভাব দেখা দেই এটি সম্পূর্ণ ভিটামিন বি ১২ এর অভাবে। 

মানব দেহে ভিটামিন বি ১২ পর্যাপ্ত পরিমাণে না থাকায় লাল রক্ত কোষ তৈরি থেকে বিরত থাকে। ফলে শরীরে অক্সিজেন স্বাভাবিক নিয়মে চলাচল করতে পারে না। এর কারণে মানুষের শ্বাস নিতে বা নিঃশ্বাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। ভিটামিন বি ১২ এর অভাবে দৃষ্টিশক্তি কমে যায় এবং চোখে ঝাপসা দেখা শুরু করে। 

আমার যে সব পুষ্টিকর খাবার খেয়ে ভিটামিন বি ১২ এর অভাব দূর করতে পারি তা হলো : ছোড়া দুধ, দই ও দুগ্ধজাত পদার্থ, ডিম, মাশরুম, বিভিন্ন মাংস ও কলিজা, টুনা, স্যামন ও ভিবিন্ন সমুদ্রিক মাছ, ঢেঁকি ছাটা চাল, বিভিন্ন ধরনের গোটা শস্য এবং ডালে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি ১২ পাওয়া যায়। এই সব পুষ্টি কর খাবার খেয়ে সহজেই ভিটামিন বি ১২ এর অভাব দূর করতে পারি।

শরীরের দুর্বলতা কাটানোর উপায়

ইতিপূর্বে আমরা কোন ভিটামিনের অভাবে শরীর দুর্বল হয়ে যায় তা সম্পর্কে যানতে পেরেছি। আমরা যানতে পেরেছি যে শরীরের ভিটামিনের অভাব হলে শরীরের দুর্বল হয়ে যায় এছাড়াও কিছু বিষয় আছে যেগুলো ফিজিক্যাল ভাবে আমাদের শরীর দুর্বল করে তুলে। এই শরীরের দুর্বলতা কাটানোর উপায় আমরা কয় জনি বা যানি। চলুন যেনে নেওয়া যাক শরীরের দুর্বলতা কাটানোর উপায়

১/ কম ঘুব হওয়ার কারনে : আমরা ঘুমানোর পরে ঘুম থেকে উঠলে মনে হয় আমাদের ঘুমটা ঠিকঠাক হয়েছে। তবুও একটা ক্লান্তিকর আমাদের শরীর থেকে দূর হচ্ছে না। এটা কে কেন্দ্র করে আমাদের শরীর সারাদিন খুব দুর্বল লাগে। তখন আমাদের বুঝতে হবে আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম হয় নি বা কোনো কারনে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটালে। তাই ঘুমের জন্য আমাদের পর্যাপ্ত সময় নিয়ে ঘুমাতে হবে। প্রতি দিন আমাদের 7 থেকে 8 ঘন্টা ঘুমানো উচিৎ।

২/ রোগ ব্যধি হলে: আমাদের শরীরের সাকালে ক্লান্তির পেছনে গুরুতর অসুখেও দায়ী হতে পারে। অসুখগুলো হলো অ্যানিমিয়া, অ্যাংজাইটি, ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রোম, অবসাদ, ডায়াবিটিস, থাইরয়েড ইত্যাদি। তাই সকালে শরীরের ক্লান্তি লাগলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
৩/ পানিশূন্যতা: অনেক সময় শরীরে পানি শূন্যতা হলে সরল দুর্বল হয়ে পড়ে। এর কারণে আমাদের বেশি বেশি পানি পান করা উচিত।

৪/ জীবন যাপন: আমরা যদি সারা দিন শুয়ে বসে কাটায় তাহলে শরীর ঝিম ধরে থাকে। তখন আমাদের মনে হবে আমাদের শরীর অনেক ক্লান্তি হয়ে আছে। বিশ্ব স্বাস্হ্য সংস্থা মতে, একজন প্রাপ্ত বয়স্ক দের সপ্তাহে কমপক্ষে 150 মিটার বা আড়াই ঘন্টা মাঝারি শারীরিক ব্যায়াম করা উচিত।

৫/বিষন্নতা: বিষন্নতার কারণে আমাদের অনেক সময় ঘুম হয় না ঘুমের সমস্যা হয়। এমন হতে পারে আমরা ঘুমানোর পরে বারবার জেগে উঠেছি। স্লিপ ইনারশিয়ার এটাও একটি কারণ। বিষন্নতায় ভুগলে ডাক্তার পরামর্শ নিতে হবে।

৬/ পুষ্টিকর খাবার : আমাদের শরীরের যদি পুষ্টি গুনের অভাব থাকে তাহলে অল্প পরিশ্রমেই ক্লান্তি হয়ে পরবো। তাই আমাদের শরীরের পুষ্টির অভাব দূর করতে আমাদের পুষ্টিকর খাবার খাওয়া খুবি দরকার। পুষ্টিকর খাবার যেমন ডিম, কলা, দুধ, ফল, বাদাম, মাছ, মাংস, শাক-সবজি শরীরে পুষ্টিগুনের চাহিদা মিটাবে।

৭/ ঘুমের উপযোগী পরিবেশ : আমাদের পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া কারণ হলো পরিবেশ। যদি ঘুমের পরিবেশ না থাকে তাহলে আপনি কোনো ভাবেই ঘুমাতে পারবেনা। ঘুমানোর আগে উপযোগী পরিবেশ নির্বাচন করে নিতে হবে।

৮/ শরীরচর্চা: সকালে ঘুম থেকে উঠে আমাদের উচিৎ কমপক্ষে এক ঘন্টার বেয়াম বা এক্সারসাইজ করা খুবিই প্রয়োজন। এর ফরে অলসতা দূর হওয়ার পাশাপাশি শরীর সুস্থ থাকে।

শরীরের দুর্বলতার ওষুধ

শরীরের দুর্বলতার কাটানোর জন্য আলাদা করে ওষধ না খাওয়া ভালো। শরীর দুর্বল হয়ে থাকে ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের জন্য। যেই সব পুষ্টিকর খাবারে বেশি পরিমানে ভিটামিন থাকে সেই সব খাবার খাওয়ার চেষ্টা করবেন। শরীরের দুর্বলতা কাঠানোর জন্য কিছু করণীয় আছে। করণীয় গুলো হলো:

  • সঙ্গে সঙ্গে এক গ্লাস পানি পান করতে হবে, এক গ্লাস গরম দুধ খেতে হবে
  • কিছুটা রেস্ট থাকতে হবে। এর জন্য আপনাকে আধা ঘন্টা বা কুড়ি মিনিট শুয়ে থাকতে হবে।।

শরীর যদি দীর্ঘ সময় দুর্বল থাকে সে ক্ষেত্র করণীয় কাজ হবে-

  • নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
  • রাতে প্রতি দিন এক গ্লাস দুধ পান করতে হবে।
  • প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
  • প্রতি দিন সাকালে এবং রাতে হালকা হলেও ব্যায়াম করতে হবে।
  • ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া এবং তাদের নির্দেশনাবলি মেনে চলা।
  • সেই সঙ্গে মনকে প্রফুল্ল রাখা এবং হাসিখুশি থাকাও শারীরিক দুর্বলতা কাটানোর অন্যতম পন্থা হিসাবে কাজ করে।

আমাদের শেষ কথা

প্রিয় পাঠক ইতিমধ্যে শরীর দুর্বলতার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়ে গিয়েছে। আপনারা যারা শরীর দুর্বলতার বিভিন্ন কারণ যানতে চান কিন্তু খুজে পাচ্ছে না। আমাদের এই আর্টিকেল তাদের জন্যই।

আশা করছি ইতিমধ্যে আপনারা শরীর দুর্বলতার বিভিন্ন বিষয়ে জানতে পেরেছেন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানতে চাইলে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো দিয়ে আমাদের সাথেই থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url