সহজ উপায়ে বাড়ির আঙ্গিনায় মাশরুম চাষ পদ্ধতি
মাশরুম বা ব্যাঙের ছাতা এটা আবার খাওয়া যায় নাকি? মাশরুম চাষ করে কি আয় করা সম্ভব? আমাদের দেশে কী মাশরুম চাষ করা যাবে? এমন ধরনের নানা প্রশ্ন আমাদের মনে জাগে। আমার সবাই এখন কম বেশি মাশরুম বিষয়ে যানি মাশরুম চাষ করে এখন ঘরে বসে মোট অংকের টাকা আয় করা সম্ভব।
বাড়ি আঙ্গিনায় আমরা সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে মাশরুম চাষ করে ফসল অর্জনের সফলতা লাভ করতে পারি। চলেন জেনে নেওয়া যাক সহজ উপায়ে বাড়ির আঙিনায় মাশরুম চাষ পদ্ধতি।
ভুমিকা
মাশরুম চাষ করে কৃষকেরা অর্থ খাতের এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। মাসুমকে ঘিরে উদ্যোক্তাকারী চেষ্টা ব্যক্তি ও সরকারি পর্যায়ে চলছে বহু বছর ধরে। এই প্রক্রিয়ায় অনেকে সফল হয়েছেন আবার অনেকে হয় নাই। আজ আমরা জানবো সহজ উপায়ে বাড়ি রাঙ্গিনায় মাশরুম চাষ পদ্ধতি।
সহজ উপায়ে বাড়ির আঙ্গিনায় মাশরুম চাষ পদ্ধতি
অল্প সময় ও অল্প খরচে সহজ উপায়ে বাড়ির আঙিনায় মাশরুম চাষ করে আমরা সহজেই লাভবান হতে পারি। বাড়ির আঙিনায় মাশরুম চাষ করতে হলে আমাদের জানতে হবে সহজ উপায়ে বাজে আঙিনায় মাশরুম চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে। চলেন জেনে নেওয়া যাক সহজ উপায়ে বাড়ির আঙ্গিনায় মাশরুম চাষ পদ্ধতি।
প্রথম প্রয়োজনীয় উপাদানটি হলো খর বা বিচালি এগুলি এক থেকে দেড় ইঞ্চি ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিতে হবে একটু পুরনো খবর হলে ভালো হয়। এর পরে একটি পাত্রে সাধারণ পানি ও তার সাথে চুন নিয়ে একসঙ্গে মিশাতে হবে বা গুলাতে হবে। এর পর এই খর গুলোকে এই পানিতে বিজিয়ে রাখতে হবে ১২ থেকে ১৪ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে এতে ঘরগুলো বিশুদ্ধ হয়ে যাবে।
১২ থেকে ১৪ ঘন্টা ভেজানোর পর খর গুলিকে পানি থেকে তুলে নিতে হবে মাথায় রাখতে হবে যে খর গুলোতে যেনো পানি না থাকা তাই ভালো করে শুকিয়ে নিতে হবে। জল ঝরে যাওয়ার পরেও খর গুলোকে আর কিছু খন রোধে শুকিয়ে নিবেন। খরটা এমন ভাবে শুকাতে হবে যাতে খরটা ধরলে বেজা বেজা না লাগে কিন্তু খরটির ভিতরে বেজা বেজা ভাব থাকবে এবং পানি গরিয়ে পরবে না এর রকম কিন্তু শুকিয়ে নিতে হবে।
এর পর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদন টি হল মাশরুমের স্পন। মাশরুমের স্পন গুলো একটা সঙ্গে আরেকটা লেগে থাকে এগুলোকে আলাদা করে নিতে হবে। এরপর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মাশরুমের বেড প্রস্তুতি এর আমাদের প্রয়োজন হল পলিথিন ব্যাগ ওই সংরক্ষণ করা খরগুলি পলিথিন ব্যাগে নিতে হবে ভালো করে খরগুলি প্লাস্টিকের ব্যাগের ভিতরে নেওয়ার পরে চেপে চেপে হাওয়া বের করে দিতে হবে।
খেয়াল রাখতে হবে যাতে প্লাস্টিক ব্যাগটি ফেটে না যায়। কিছুটা পরিমাণ খড় দেওয়ার পরে এরপরে মাশরুমের যে স্পনগুলি আছে চারিদিকে ভালো করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিতে হবে। অল্পসংখ্যক মাশরুমের স্পন ছুটিয়ে দেওয়ার পরে আবার খড়গুলো ভর্তি করতে থাকবো পলিথিন বেগে। কিছুটা পরিমাণ খবর দেওয়ার পর আবার একইভাবে চাপ দিয়ে ভিতরের যে বাতাস গুলি রয়েছে বাইরে বের করে দিব।
যতটা পরিমাণ খরগুলি চেপে চেপে ভর্তি করা যায় ততটাই কিন্তু ভালো করে চেপে চেপে দিতে হবে। এরপরে দ্বিতীয় স্পনের লেয়ার গুলো একই নিয়মে ছড়িয়ে দেব। এই একই পদ্ধতিটা কিন্তু রিপিট হতে থাকবে। বড় একটি প্লাস্টিক ব্যাগে আপনি তিন থেকে চারটা কিন্তু লেয়ার দিতে পারেন মাশরুমের স্পনের।
চারটি লেয়ার নেওয়া হয়ে গেলে ভালো করে চেপে বায়ু বের করে দিতে হবে যাতে পলিব্যাগের ভিতরে কোন বায়ু না থাকে। পরে প্যাকেটের মুখের দিকটা ভালো করে বন্ধ করে দিতে হবে । এভাবে সকল বেট তৈরি করে নিবেন।
এরপরে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো একটি পিন বা কোনো কিছু দিয়ে ৫ থেকে ৬ টি ফুটো করে দেবেন ব্যাগের মধ্যে যাতে বায়ু চলাচল করতে পারি আবার আপনারা চাইলে ওই ফুটগুলোতে একটু করে তুলো গুজে দিতে পারেন। তুলো দিলেও হবে আবার না দিলেও হবে। বেড তৈরির তিনদিন পর বেট গুলি সব সুটলি দিয়ে বা কোন কিছু দিয়ে ঝুলিয়ে রাখতে হবে।
মাশরুম চাষের জায়গা নির্ধারণ
মাশরুম চাষের জন্য মাশরুম চাষের জায়গা নির্ধারণ করে নিতে হবে। আমাদের এমন একটি জায়গা নির্ধারণ করে নিতে হবে যেগানে সরাসরি সূর্যের আলো না লাগে তাই বলে এমন নয় যে আমার অন্ধকার ঘরে রেখে দিব। অবশ্যই কোন আলোর প্রয়োজন নেই কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে যাতে বাহিরের বিশুদ্ধ বাতাস সহজে প্রবেশ করতে পারি।
মাশরুমের স্পন রোপন করার ১৫ দিন পর দেখবেন একটু একটু করে পরিবর্তন হচ্ছে। ১৫ দিন পর আমাদের যা করতে হবে মাশরুম রোপন কৃত বেটে পানি স্প্রে করা শুরু করতে হবে। সকাল ও বিকেলে পানি দিয়ে ভালো করে স্প্রে করে ভিজিয়ে দিতে হবে। ১৫ দিন হওয়ার আগে মাশরুমের বেডে কোনরকম স্প্রে করা যাবে না এই বিয়টা খেয়াল রাখতে হবে।
আরো ২৮ দিন পরে দেখবেন মাশরুমের বেডে আগের চেয়ে অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে মাশরুমের বেডগুলি সাদা সাদা হয়ে যাবে। ৩০ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে মাশরুমগুলো ছিদ্র দিয়ে বের হয়ে আসছে।
মাশরুমের পরিচর্যা করার নিয়ম
মাশরুম চাষের জন্য মাশরুম চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে হবে এবং শুম চাষের জায়গা নিয়ে ধরুন যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি মাশরুমের পরিচর্যা করার নিয়ম ও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ৩০ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে মাশরুমগুলো বের হওয়ার পরে দেখবেন ধীরে ধীরে মাশরুমের গোদ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং প্রতিদিনিই মাশরুমের গোদ বৃদ্ধি পাবে এই সময় কন্টিনিউ সকাল বিকাল পানি স্প্রে করে যেতে হবে।
তাপমাত্রা যদি খুব বেশি হয় বা টেম্পারেচার যদি বেড়ে যায় তাহলে দিনে দুইবারের জায়গায় তিন থেকে চার বার পানি স্প্রে করতে হবে। পানি ছাড়া আর অন্য কোন কিছু স্প্রে করার দরকার নেই। যদি মাশরুম গুলো কালো কালো হয়ে যায় তাহলে মনে করবেন মাশরুমের কোন ছত্রাকের আক্রমণ হয়েছে তখন ভিনেগার মেশানো পানি স্প্রে করতে হবে।
৪০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে মাশরুমগুলো বাজারজাত করার জন্য প্রস্তুত হয়ে গিয়েছে খাবার জন্য একদম রেডি। আর যেগুলো ছোট অবস্থায় থাকবে বা নতুন করে মাশরুম হয়ে উঠছে সেগুলো বাজারজাত করার জন্য উপযুক্ত হয় নাই।
কোন মাশরুম চাষের জন্য ভালো
মাশরুম চাষ করার সময় আমাদের মনে একটি প্রশ্ন জাগে যে কোন মাশরুম চাষের জন্য ভালো? যে মাশরুমগুলো চাষ করি আমরা সহজেই মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় করতে পারবো। মাশরুমের অনেক জাত আছে অনেক প্রজাতি আছে এই সবগুলোকে তিনটে ভাগে ভাগ করে চাষ করা যায়।
যেমন একটি হলো সারা বছর চাষ করা যায়, দুই নম্বরে হলো শুধুমাত্র গ্রীষ্মকালে চাষ করা যায়, তিন নম্বরে শীতকাল চাষ করা যায়। সারা বছর মাশরুমটি চাষ করা যায় সেটি হলো: western মাশরুম। এই Western মাশরুমের আবার ২৭ টা প্রজাতি আছে এই ২৭ টা প্রজাতি সারা বছরই ফলন দেয় কিন্তু শীত এবং গ্রীষ্ম কালে এই Western মাশরুম চাষ করা উপযোগী নয়।
গরমের সিজনে বা গ্রীষ্মকালে যে তিনটা মাশরুমের প্রজাতি চাষ করতে পারব তাহলে : এক নম্বরে মিল্কি, দুই নম্বরে ঋষি এবং তিন নম্বরে স্ট্র এই গুলা আমরা মার্চ মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত চাষ করতে পারব। আর শীতকালে যে মাশরুমগুলো চাষ করতে হয় সেগুলো হলো : বাটন, ইরিঞ্জ,সীতাকে এছাড়াও আরো দুই একটা মাশরুম আরো শীতকালে চাষ হচ্ছে হিরিছি মাশরুমের জাত এই জাম গুলো চাষ করে সহজে মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব।
লেখক বক্তব্য
সহজ পদ্ধতিতে বাড়ির আঙিনায় মাশরুম চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়ে গিয়েছে। আপনারা যারা মাসুম চাষ পদ্ধতি এবং মাশরুম চাষ করে মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা ইনকাম করতে চান আমার আর্টিকেল শুধু তাদের জন্য।
আশা করছি ইতিমধ্যে সহজ পদ্ধতিতে বাড়ির আঙিনায় মাশরুম চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত সকল তথ্য জেনে গিয়েছেন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জানতে চাইলে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো দিয়ে সাথেই থাকুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url