ধান চাষের সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি
ধান হলো বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য। তাই আমাদের ধান চাষের সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে হবে। বাংলাদেশ ধান উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে চতুর্থ নাম্বার জায়গা দখল করে নিয়েছে। ধান চাষ করে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা বাড়িয়ে দেওয়া আমাদের মূল লক্ষ্য।
বাংলাদেশে সাধারণত চাষকৃত ধানগুলোর মধ্যে হলো ব্রি ধান ২৮, ব্রি ধান ২৯, ব্রি ধান ৩৬, ব্রি ধান ৪৭, ব্রি ধান ৫৮ ইত্যাদি ও হাইব্রিড জাতীয় ধানগুলো উৎপাদন করে থাকি। এবার জেনে নেওয়া যাক ধান চাষের সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি সম্পর্কে।
ভূমিকা
প্রিয় পাঠক আমাদের এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে ধান চাষের সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি, ধান লাগানোর কতদিন পর সার দিতে হবে এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ধান চাষের সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি ও অন্যান্য বিষয়ে জানতে চাইলে আমাদের লেখা আর্টিকেল গুলি ভিজিট করতে পারেন।
ধান চাষের সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি
ধান চাষের সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি সম্পর্কে আমাদের যদি না জানা থাকে তাহলে ধান চাষ করে লাভবান হতে পারব না। ধান চাষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বিচ বাছাই করা। বীর্য যদি পোকায় আক্রান্ত বা ভালো না হয় তাহলে আমরা রোপন করার জন্য ভালো চারা পাবো না। প্রথমে আমরা জানবো বাছাইয়ের উপায় বা করনীয়।
বীজ বাছাইয়ের উপায় ও করণীয় গুলো হল প্রথমে আমাদের একটি পাত্রে পরিমাপ মতো বা ১০ লিটার পরিষ্কার পানি নিতে হবে। ১০ লিটার পানিতে ৩৭৫ গ্রাম ইউরিয়া সার মিশাতে হবে। তারপরে ১০ কেজি ধানের বীজ এই পানিতে দিয়ে ভালো করে মারতে হবে যাতে ভালো বীজগুলো পানির নিচে গিয়ে জমা হয় এবং খারাপ পানির উপরে ভেসে ওঠে।
হাত বাচালন দিয়ে খারাপ বীজ গুলো উপর থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। ভালো বীজগুলো ইউরিয়া মিশানো পানিতে তিন চারবার ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। বীজগুলো হালকা রোদ দিয়ে শুকিয়ে নিয়ে হবে। শুকিয়ে নিয়ে জাগ দিতে হবে এবার জানবো জাগ দেওয়ার উপায়।
বীজ শোধন ও জাগ দেয়ার পদ্ধতি : বাছাইকৃত বীজ বীজ বাজারের উপায ও করণীয় গুলো মেনে বাছাই করে থাকি তাহলে সাধারণভাবে শোধন না করলেও চলে। তবে যদি শোধন করি তাহলে আমাদের ৫০ থেকে ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের তাপমাত্রা বীজগুলো ১০ থেকে ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে পারি এতে বীজের জীবাণু থাকবে না। বীজে যদি বাকানি রোগের আশঙ্কা থাকে তাহলে ছত্রাকনাশক ব্যবহার করে আমরা বীজ শোষণ করতে পারি।
বীজ অনুযায়ী সমান পরিমাণে পানি নিয়ে ছত্রাক নাশক মিশিয়ে বীজকে পানিতে ডুবিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিয়ে ১০ থেকে ১৫ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এরপরে বীজ পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে হালকা পানি ঝরিয়ে নিতে হবে। তারপ শোধনকৃত বীজ বাঁশের তৈরি পাত্র শুকনো খড় বিছিয়ে নিয়ে কলাপাতা বা কচু পাতাই বীজ নিয়ে ওপরে আবার খড় দিয়ে কোন ভারী জিনিস দিয়ে চাপ দিয়ে রাখুন। তিন দিনের মধ্যে বীজের অঙ্কুর সম্পূর্ণভাবে বের হয়ে আসবে।
আদর্শ বীজতলা তৈরি নিয়ম : এটেল বা দো-আশ মাটি বীজতলার জন্য খুব ভালো। প্রথমে আমাদের করতে হবে যেখানে বীজ তলা তৈরি করব সেখানে গোবর সার দিয়ে পানি দিয়ে চাষ করে নিব। চাষ করা হয়ে গেলে বীজতলায় ভালো করে মই দিয়ে নিব মই দেওয়া হয়ে গেলে ৮ থেকে ১০ দিন রেখে দিব। ৮ থেকে ১০ দিন রাখার পরে দেখবেন বীজ তোলার আগাছা খড় পচে গিয়েছে।
পচে যাওয়ার পরে আবার ভালো করে মই দিয়ে নিতে হবে। তারপরে বীজ তলায় ঠিকমতো পানি দেওয়ার জন্য বা পানি জমা হয়ে থাকার জন্য নিচ তলায় বেড তৈরি করতে হবে যাতে পানি ধরে রাখা যায়। খেয়াল রাখতে হবে বীজতলার মাটি সমান আছে কিনা সমান থাকলে এখন বীজ তলায় আপনি বীজ সিটিয়ে রোপন করতে পারেন।
উপযুক্ত বয়স হয়ে গেলে বীজতলা থেকে যারা সংরক্ষণ করে প্রধান জমিতে রোপন করতে পারেন। চারা রোপন করার আগে ভালো করে রোপন কিত জমি আগাছা মুক্ত করতে হবে। জমিতে অন্যান্য কীটনাশক গোবর সার ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে জমি প্রস্তুত করে চারা রোপন করতে হবে।
ধান লাগানোর কতদিন পর সার দিতে হবে?
আমরা সকলেই কম বেশি ধান চাষ করে থাকি। কৃষকের মনে একটা প্রশ্ন থেকেই যায় ধান লাগানোর কতদিন পরে সার দিতে হবে? এই সম্পর্কে আমরা সঠিক নিয়ম জানিনা চলে জানা যাক ধান লাগানোর কতদিন পর সার দিতে হবে। আমরা সাধারণত ধান লাগানোর পর দুই সপ্তাহ ক্ষেতে পানি দিয়ে থাকি মা ধরে রাখি।
সার প্রয়োগের মাধ্যমে ধানের ফলন ৭ থেকে ১৬ ভাগ বৃদ্ধের পায়। ধান লাগানোর ১৫ থেকে ২০ দিন পর প্রথম কিস্তিতে ইউরিয়া, পটাশ, দানাদার সারকে সমান তিন ভাগে ভাগ করে প্রয়োগ করতে হবে। আবার ৩০ থেকে ৩৫ দিন পর ধানের জমিতে তোর আসার পাঁচ থেকে আট দিন আগে দ্বিতীয় কিস্তিতে সার প্রয়োগ করব।
ধানের জমি প্রস্তুতি করার সময় ইউরিয়া, টিএসপি, পটাশ, জিপসাম, সালফেট ধানের জমি তৈরি করার সময় ভালো করে মাটির সঙ্গে মিশাতে হবে। আর যদি পারেন প্রথম চাষের সময় জৈব সার মাটিতে ভালো করে মিশিয়ে নিবেন। এছাড়াও তাহলে পোকা লাগার সম্ভাবনা থাকলে ভালো কোম্পানি দেখে পোকা দমমনের কীটনাশক জমিতে স্প্রে করবেন। খেয়াল রাখতে হবে জমিতে অতিরিক্ত মাত্রায় সার বা কীটনাশক ব্যবহার করা যাবে না।
ইউরিয়া সার এর কাজ কি?
আমরা সকলেই ধানের জমিতে ইউরিয়া সার প্রয়োগ করে থাকি। কিন্তু ইউরিয়া সার এর কাজ কি আমরা সবাই জানি না। এবার জানব ইউরিয়া সারের কাজ কি? ইউরিয়া সার প্রয়োগ করাতে সাধারণত যে কাজগুলো করে থাকে গাছের নাইট্রোজেনের অভাব দূর করে গাছের পাতা বৃদ্ধি করে এবং গাছগুলোকে শক্তিশালী ও লাবণ্য দেখায়। ইউরিয়ার সার প্রয়োগের মাধ্যমে গাছের সালোকসংশ্লেষণে ক্ষমতা বাড়ায়।
এটি ফুল বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ইউরিয়া সার শিকড়ের বৃদ্ধি এবং বিস্তারে সহায়তা করে। ইউরেশার প্রয়োগ করলে গাছের পর্যাপ্ত পরিমাণ পাতা ডালপালা ও কান্ড উৎপাদনে সাহায্য করে। যেকোনো ফসলের নতুন কুশি বা পাতা উৎপাদনে সহায়তা করে। আসল উৎপাদনের প্রথম থেকে দুই থেকে তিন কিস্তিতে এটি ব্যবহার করা হয়।
ধানের জমিতে সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা
ধান চাষের জন্য ধানের জমিতে সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সময় মত ফসলে পানি বা সেচ দিতে না পারলে ফসল ভালো হবে না। ফসল ভেদে পানির চাহিদা সঠিকসভাবে পূরণ করতে হবে। জমিতে চারা রোপনের ১০ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত জমিতে পানি রাখতে হবে যাতে ধানের চারা সহজেই শিকড় গজাতে পারে ।
সাধারণত আমরা জমিতে কৃত্রিম উপায়ে নলকূপ থেকে পানি সরবরাহ করে থাকি। পানির অপর নাম জীবন এটা যেমন সকল জীবের প্রয়োজন গাছের ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য। পানির মাধ্যমে গাছের বৃদ্ধি ও ফলন বৃদ্ধির কাজে লাগে। পানির অভাবে ধানের গাছের মৃত্যু হতে পারে। তাই জমিতে সেচের ব্যবস্থা করা অতি জরুরী একটি বিষয়।
নলকূপ দিয়ে আমরা জমিতে পরিমাণ মতো পানি দিয়ে রাখবো। খেয়াল রাখতে হবে যাতে জমি থেকে পানি বের হয়ে না চলে যায়। সেচ ও পানি দেওয়ার বিভিন্ন উপায়ে রয়েছে। ধান ক্ষেতে সাধারণত আমরা নলকূপ থেকে মেশিনের সাহায্যে জমিতে পানি দিয়ে থাকি। পানি যাতে জমি থেকে বের না হয়। তার জন্য আমরা যে কাজটি করতে পারি জমির লাইলের চারদিক দিয়ে পলির সাহায্যে পানি ধরে রাখতে পারি।
যখন ধানের জমিতে ধানের নতুন করি বের হবে তখন আমাদের ঘন ঘন সেচ দিতে হবে। আমরা সাধারণত জমিতে মুক্ত প্লাবন পদ্ধতিতে শেষ দিয়ে থাকি। জমির একপাশে দিয় পানি প্রবেশ করানো হয়। এক্ষেত্রে যদি জমিতে অতিরিক্ত পানি দেওয়া হয় তাহলে আমাদের উচিত অন্য পাশ দিয়ে পানি বের করে দেওয়া। ধান কাটার ১০ থেকে ১৫ দিন আগে সেচ দেওয়া বন্ধ করে দিতে হবে।
ধানের শীষে পানি থাকে কেন
আমরা ধান চাষ করার সময় দেখতে পাই ধানের শীষে পানি জমে থাকে। অনেক মনে এই প্রশ্নটি জাগে যে ধানের শীষে পানি থাকে কেন? চলেন এ বিষয়ে বিস্তারিত জানি। সাধারণত পুষ্টি সরবরাহ বা গ্রহণ করে থাকে ধান গাছ পানি থেকে। এতে ধানের আগাছা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং এবং ধানকে প্লাবিত করে আর পোস্টে ও সূর্যালোকের জন্য ধান গাছকে সহায়তা করে তাই আমরা ধানের শীষে পানি দেখতে পাই।
লেখকের মন্তব্য
আমাদের এই আর্টিকেলের মধ্যে আলোচনা করা হয়েছে ধান চাষের সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি ও অন্যান্য বিষয়বস্তু নিয়ে। আপনারা যারা ধান চাষের সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি সম্পর্কে জানেন না আমার এই আর্টিকেল শুধু তাদের জন্য।
আশা করছি ইতিমধ্যে ধান চাষের সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি সম্পর্কে আপনারা বিস্তারিত জেনে গিয়েছেন। আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জানতে চাইলে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url