ঐতিহাসিক ৭ ই মার্চের ভাষণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো
ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণটি হয়েছিলো রেসকোর্স ময়দানে। ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণে জনগণকে মুক্তি ও স্বাধীনতা অর্জনের জন্য র্সবাত্মক যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান।
২৫ শে মার্চ নিরস্ত্র জনগণের ওপর পাকিস্তান সেনাবাহিনী আক্রমণ চালায়। ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরের বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা দেন।
ভূমিকা
প্রিয় পাঠক আমাদের এই আর্টিকেল এর মধ্যে ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ও ২৫ মার্চে কাল রাত্রির ঐতিহাসিক ঘটনা আলোচনা করা হবে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা বাঙালির উপরে যে অত্যাচারটি করেছিল সকল বিষয়ে তুলে ধরা হবে।
ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। এই ভাষণে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ-শাসন বঞ্চনার ইতিহাস, নির্বাচনের জয়ের পর বাঙালির সাথে প্রতারণা ও বাঙালির রাজনৈতিক ইতিহাসের পটভূমি তুলে ধরেন।
বিশ্ব ইতিহাসে বিশেষ করে বাঙালি জাতির ইতিহাসে এই ভাষণ এক স্মরণীয় দলিল। পৃথিবীর ইতিহাসে যেসব ইতিহাসিক ভাষণের নজির আছে ৭ই মার্চের ভাষণ তার অন্যতম; পৃথিবীর স্বাধীনতাকামী মানুষের নিকট এই ভাষণ অমর হয়ে থাকবে। ৭ই মার্চের ভাষণ থেকে বাঙালির ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রেরণা ও মুক্তিযুদ্ধের নির্দেশনা পায়।
এই ভাষণের পরে বাঙালি জাতির সামনে একটি মাত্র গন্তব্য নির্ধারণ হয়ে যায়, তা হল স্বাধীনতা। ৭ই মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু যে স্বাধীনতার ডাক দেন সে ডাকে বাঙালি জাতি মুক্তিযুদ্ধ প্রস্তুতি নিতে থাকে। বঙ্গবন্ধুর ভাষণে পরবর্তী করণীয় ও স্বাধীনতা লাভের দিকনির্দেশনা ছিল প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো।
তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। তিনি আরো বলেন, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেবো, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো, ইনশাল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতা সংগ্রাম। জয় বাংলা।"
২৫ শে মার্চের কাল রাত সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো
১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চের রাত্রিটি ছিল বাঙালির জীবনে ঐতিহাসিক রাত। ১৭ ই মার্চ টিক্কা খান ও রাও ফরমান আলী অপারেশন সার্চলাইট নামক কর্মসূচির মাধ্যমে বাঙালির ওপর নৃশংস হত্যাকান্ড পরিচালনার নীল নকশা তৈরি করে। ২৫ শে মার্চ রাতে পৃথিবীর ইতিহাসে বর্বরতম গণহত্যা, অপারেশন সার্চলাইট শুরু হয়।
ইয়াহিয়া ও ভুট্টো ২৫ শে মার্চ গোপনে ঢাকা ত্যাগ করেন। ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। হত্যা করে বহু মানুষকে সেই রাতে শত শত বাঙালি শহীদ হন। পাকিস্তানি বাহিনী ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ ক্যাম, পিলখানা ইপিআর ক্যাম্প ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আক্রমণ চালায় ও নৃশংসভাবে গণহত্যা ঘটায়।
বাংলাদেশের ইতিহাসে ২৫ শে মার্চের রাত কালরাত্রি নামে পরিচিত। এই দিবসটি এখন জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃত। ২৫ শে মার্চের কালরাত্রিতেই অর্থাৎ ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।
স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো
গ্রেফতার হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে অর্থাৎ ২৫ শে মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দেন। ঘোষণাটি ছিল ইংরেজিতে, জাতীয় বিশ্ববাসী ঘোষণাটি বুঝতে পারে। স্বাধীনতার ঘোষণার বাংলা অনুবাদ : ইহা হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন।
আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানাইতেছি যে, যে যেখানে আছে, যাহার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে রুখে দাঁড়াও সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করো। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈনিক টিকেও বাংলার মাটি হইতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও।
স্বাধীনতার এই ঘোষণা বাংলাদেশের সকল স্থানে তদানিন্তন ইপিআর এর ট্রআন্সমিটার, টেলিগ্রাম ও টেলিপ্রিন্টারের মাধ্যমে প্রচার করা হয়। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা ২৬ শে মার্চ দুপুরে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা এম. এ. হান্নান চট্টগ্রামের বেতার কেন্দ্র থেকে একবার এবং সন্ধ্যায় কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে দ্বিতীয়বার প্রচার করেন।
২৭ শে মার্চ সন্ধ্যায় একই বেতার কেন্দ্র হতে সামরিক অফিসার মেজোট জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার সমর্থনে বক্তব্য প্রধান করেন। বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা এবং এর প্রতি বাঙালির সামরিক, আধা সামরিক ও বেসামরিক বাহিনীর সমর্থন ও অংশগ্রহণের খবরে স্বাধীনতাকামে জনগণ উজ্জীবিত হয়।
লেখকের মন্তব্য
আমাদের এই আর্টিকেলের মধ্যে তুলে ধরা হয়েছে ৭ই মার্চের ভাষণ, ২৫ শে মার্চের গণহত্যা ও স্বাধীনতার ঘোষণা এই সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করা হয়ে গিয়েছে। আপনারা যারা এই বিষয়ে জানেন না আমার এই আর্টিকেল শুধু তাদের জন্য।
আশা করছি ইতিমধ্যে উপরোক্ত বিষয়ে সম্পর্কে জেনেছেন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এরকম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো জানতে চাইলে আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url