হাইব্রিড শসা চাষ পদ্ধতি

শসা অতি জনপ্রিয় ও পরিচিত একটি সবজি। শসা এই সবজিটি এখন বারোমাসি পাওয়া যায়। হাইব্রিড শসা চাষ করে অধিক লাভবান হচ্ছে। হাইব্রিড শসা চাষ পদ্ধতি বা কোন প্রক্রিয়ায় চাষ করলে লাভবান হওয়া যায় তার সম্পর্কে জানব।



হাইব্রিড শসা চাষ করার উপযুক্ত মাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানব। কোন মাসে হাইব্রিড শসার কোন জাতটি উপযোগী এই সকল বিষয়ে ধারণা না থাকলে হাইব্রিড শসা চাষ করতে পারবোনা। হাইব্রিড শসা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কের জেনে নিবো।

ভূমিকা

প্রিয় পাঠক আমাদের আর্টিকেলের মাধ্যমে হাইব্রিড শসা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। জমিতে চারা রোপণ করার আগ থেকে বাজারজাত করা সকল বিষয়ে আলোচনা করা হবে। কোন সময়ে কোন কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে এবং সার প্রয়োগ করা গাছের যত্ন নেওয়া সকল বিষয়ে আলোচনা করা হবে।

যাদের হাইব্রিড শসা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা নেই আমার আর্টিকেল শুধু তাদের জন্যই। আমার এই আর্টিকেল পড়ে হাইব্রিড শসা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা নিতে পারেন।

হাইব্রিড শসা চাষ পদ্ধতি

হাইব্রিড শসা চাষ পদ্ধতি সর্বপ্রথম হলো জাত নির্বাচন। কোন মাসে হাইব্রিড শসা চাষ করলে আমরা ভালো ফলন পাব। কোন কোন মাসে শসা চাষ করবেন তার উপরে নির্ভর জাত বেছে নিতে হবে। হাইব্রিড শসা চাষ করার সময় কিছু কমন সমস্যায় পড়তে হয় তার মধ্যে হলো পুরুষ ফুল বেশি হয় এবং তুলনা মুলক স্ত্রী ফুল খুবিই কম হয়।

তবে কিছু পরিচর্যা এবং পদ্ধতির মাধ্যমে এটি মোটামুটি পুষিয়ে নেওয়া যায় এবং দাম ভালো থাকে বিধায় খুব সমস্যা হয় না। ভালো একটা কোম্পানি দেখে হাইব্রিড বীজ আমাদের সংগ্রহ করতে হবে। হাইব্রিড শসার জাত গুলো হল
  • Fi হাইব্রিডন থাই গ্রি
  • F-1 হাইব্রিড US-7070
  • F-1 হাইব্রিড US-8080
  • F-1 হাইব্রিড বেলা
প্রথমত বীজ হালকা রোদে দিয়ে শুকিয়ে নিয়ে ৮-১০ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে দিতে হবে। ৮ থেকে ১০ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখলে দেখবেন ব্রিজ থেকে শিকড় বের হয়েছে। হাইব্রিড শসা চাষের জন্য জমিতে বেড করে নিতে হবে যাতে গাছের গোড়ায় পানি জমা না হয়ে থাকে। বীজ রোপন করার জায়গাটা ভালো করে নিরি কাছে দিয়ে মাটি আগলা জোরজোড়া করে নিতে হবে। আগলা করা মাটিতে বীজের শিকড় নিচের দিকে দিয়ে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। এরপর দুই থেকে তিন দিনের মধ্যেই গাছ বের হয়ে যাবে।

শসা গাছে কীটনাশক দেওয়ার পদ্ধতি

সময় মত শসা গাছে কীটনাশক বা সার দেওয়া না হলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে না। শসা চাষ করার জন্য শসা গাছে কীটনাশক বা সার দেওয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে আমাদের ধারণা থাকতে হবে। শসা গাছ যখন বীজ থেকে বের হবে তখন আমাদের একটি ছত্রাক নাশক এবং একটি কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।

সে ক্ষেত্রে কার্ব-ডার জিং গ্রুপের ছত্রাকনাশক এবং এবং আলমরেটিন ব্যঞ্জন গ্রুপের কীটনাশক ব্যবহার করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে পোকা এবং গোড়া পঁচা রোগ হবে না। এরপর আবার পাঁচ থেকে সাত দিন পরে একই ধরনের কীটনাশক এবং একই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে এতে গাছের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।

স্পে করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে সম্পন্ন শসা গাছটি ভিজেছে কিনা। আর যদি সাধা মাছি আক্রমণ হয় সে ক্ষেত্রে সাদা মাছি দমন করার কীটনাশক গুলা ব্যবহার করতে পারেন। তবে সাত দিন পরে পরে নিয়মিত কীটনাশক বা ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে। যাতে কোন পোকামাকড় গাছে আক্রমণ না করতে পারি।

বীজ থেকে শসা জন্মাতে কত দিন সময় লাগে

আমাদের সকলের মনে একটা প্রশ্ন থেকে যায়, ব্রিজ থেকে শসা জন্মাতে কত দিন সময় লাগে? একটি গাছে শসার ফলন আসতে ৬০ থেকে 70 দিনের মধ্যে সময় লাগে। যদি আপনি গাছের পরিচর্যা ঠিক করেন তাহলে ৬০ থেকে ৭০ দিনের আগেই ফলনের জন্য প্রস্তুত হবে।

শসা গাছে ফল আসার পরে ৮ থেকে ১০ দিনের মধ্যে আপনি শসা বাজারজাত করতে পারবেন। শসা গাছে রেখে অতিরিক্ত বড় করা যাবে না এতে শসার স্বাদ কমবে ফলন বৃদ্ধির হার কমে যাবে। তাই ৮ থেকে ১০ দিনের মধ্যে শশা তুলে ফেলতে হবে।

শসাতে পানির প্রয়োগের নিয়ম

পানি শসা চাষের অন্তত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শসার ওজন বৃদ্ধি করতে এর ভূমিকা অতুলনীয়। গাছের গোড়ায় পানি দেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে পানি গাছের গোড়ায় জমে না থাকে। গাছের গোড়ায় যদি পানি জমে থাকে তাহলে শসা গাছ মরে যাওয়া সম্ভাবনা থাকবে তাই পানি দেয়ার সময় শুধু গাছের গোড়া ভালোভাবে ভিজিয়ে রাখবো। যেহেতু শুধু গাছের গোড়া ভিজিয়ে রাখা হয় তাই একদিন পরপর আমরা পানি দিতে পারি। পানি প্রয়োগের মাধ্যমে শসার ওজন অতি তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পাবে।

শসাতে সার প্রয়োগের নিয়ম

বীজ থেকে গাছ বের হওয়ার ৫ থেকে ৬ দিন পরে স্যার প্রয়োগ করার জন্য উপযোগী হয়ে যায়। শসা গাছে কি কি সার প্রয়োগ করলে শসার ফলন বেড়ে যায় তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানব। শসা গাছের ফলন দ্বিগুণ করার জন্য আমাদের যেগুলো সার প্রয়োগ করতে হবে তার মধ্যে রয়েছে গোবর সার, টিএসপি, এমওপি, জিপসাম, দস্তা, বরুণ এই গুলা সার কারো রোপনের আগে মাটির সাথে দিয়ে রাখতে হবে। আর গাছের বয়স পাঁচ থেকে ছয় দিন হয়ে গেলে গোবর সার, পটাশ, টিএসপি, ইউরিয়া, দিতে হবে। চারা রোপনের আগে বা পরে শতক প্রতি কতটুকু সার দিতে হবে নিচে দেওয়া হল :

চারা রোপণের আগে শতক প্রতি সার
  • ৫০০০ কেজি গোবর সার
  • ১০০ কেজি টিএসপি
  • ৫০ কেজি এমওপি
  • ৫০ কেজি জিপসাম
  • ১২ কেজি দস্তা
  • ১০ কেজি বরণ
চারা রোপনের পাঁচ থেকে সাত দিন পর প্রতি শতক জমিতে
  • ৫০০০ কেজি গোবর সার
  • টিএসপি ১০০ কেজি
  • ইউরিয়া ৮০ কেজি
  • পটাশ ৫০ কেজি

লেখকের মন্তব্য

আমাদের এই আর্টিকেলের মধ্যে হাইব্রিড শসা চাষ পদ্ধতি ও শসা চাষের অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়ে গিয়েছে। আপনারা যারা হাইব্রিড শসা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তারা আমার আর্টিকেল পড়তে পারেন।

আশা করি ইতিমধ্যে আর্টিকেল পড়ে হাইব্রিড শসা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জানতে চাইলে আমাদের ওয়েবসাইটি ফোল করতে থাকেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url